হাসলি মোরগ

মোঘল আমল থেকে এ অঞ্চলে মোরগ লড়াই চালু হয় বলে জানা যায়। বিশেষ করে সরাইলের দেওয়ানদেরও প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় মোরগ লড়াই এ অঞ্চলে বিশেষ তাৎপর্য লাভ করে। দুটি মোরগের মধ্যে অনুষ্ঠিত লড়াইয়ের মোরগের নখগুলোকে চোখা তী্ন করা হয়। যতণ না পর্যন্ত একটি মোরগ পরাজিত হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত লড়াই চলতে থাকে সরাইলের দ্‌েওয়ান মনোয়ার আলী সুদূর ইরান থেকে মতান্তরে রায়বেরিলি থেকে এক প্রকার যুদ্ববাজ মোরগ এদেশে আনয়ান করেন। এ ধরনের মোরগ বা আসলি মোরগ নামে সবাই চেনে। অত্যন্ত দুর্ধর্ষ হিসেবে এদের সুনাম আছে।এ মোরগ গুলো যুদ্বের সময় যে কায়দায় মার দেয় এগুলোর আলাদা নাম আছে। যেমন নিম, করি, বাড়ি, ফাক, ছুট ‌ও কর্ণার। হাসলি মোরগের বৈশিষ্ট হচ্ছে এগুলোর পা লম্বা। পাশাপাশি দেহ, গলা সবই লম্বা প্রকৃতির। এগুলোর দেহে পালক কম থাকে। নখগুলো বিশেষ বৈশিষ্ট মন্ডিত। হাসলি মোরগ যে গুলোয় গলায় পালক থাকে না সেগুলো অত্যন্ত জেদী যোদ্বা থাকে। এগুলো পরাজয় বরণে পিছু হটেনা। শেষ পর্যন্ত যুদ্ব চালিয়ে যায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া'তে প্রতি বছর শীতে মোরগ লড়াই অনুষ্টিত হয়ে থাকে। সাধারণত ব্রাহহ্মণবাড়িয়া ‌ও ঢাকার মধ্যে লড়াই অনুষ্টিত হয়। তাছাড়াও সরাইল, সিলেট, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ইত্যাদি যায়গায় ‌ও লড়াই অনুষ্টিত হয়।
তথ্য সূত্রঃউইকিপিডিয়া

Read More

ধুপিনিবক

ধুপিনি বক যার ইংরেজী নাম Grey Heron আর বৈজ্ঞানিক নাম - Ardea cinerea । এরা ধবলবক,খাইরাবক,পিডালিবক, অঞ্জন,সাদাকাক নামেও পরিচিত।
আকারে প্রায় ৯৮সে.মি লম্বা গায়ের পালক ছাই রংয়ের, লম্বা হলুদ পা,আমার চোখের উপর ভ্র'র অংশটা কালো,সেখান থেকেই লম্বা এক জোড়া কালো টিকি বেড়িয়েছে,ডানার ভারী পালকগুলো কালো,লম্বা হলুদ তীক্ষ্ণ ঠোঁট।
একা চরে বেড়াতে পছন্দ করে।গাছের উঁচু ডালে খড়কুঁটো আর ছোট ডালপালা দিয়ে বাসা বাঁধে। শামুক,মাছ,ব্যাঙ তাদের প্রধান খাদ্য। মার্চ থেকে জুলাই এদের প্রজনন সময়। ডিম দেয় ৩ থেকে ৬ টি।

Read More

কর্চে বক

কর্চেবক ইংরেজীতে Intermediate Egret, Yellow-billed, Egret বা Median নামে পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Ardea intermedia । এটি Asia থেকে Australia ও east Africa তে দেখা যায়। এর সারা শরীর সাদা পালকে আবৃত আর ঠোট গোলাপী ঠোটের মাথায় একটু কালো।

Read More

মোরগ-মুরগি

মোরগ-মুরগি গৃহপালিত পাখিদের মধ্যে অন্যতম এর মাংশ ও ডিম প্রোটিনের অন্যতম উ এরা ১০-১২ ফুটের বেশি উড়তে পারেনামুরগি একবারে ১২-২০ টি ডিম পাড়ে ও তা দিয়ে বাচ্চা ফুটায় এরা জাত ভেদে বিভিন্ন রং ও বর্ণের হয়ে থাকে আমাদের দেশে বিভিন্ন জাতে মুরগীর চাষ হয় এর মধ্যে__

১. বয়লার মুরগী (বছরে ৩০০ ডিম পাড়ে)
২. কক্লার/কক্ মোরগ (roostএর জন্য বিখ্যাত)
৩. দেশী মুরগী (১০-১২ টা ডিম দেয়, মূলত প্রাকৃতিক উপায়ে বংশবিস্তার করে)
৪. পাকিস্তানী মুরগী
৫. বন মোরগ
৬. গিন্নী মুরগী
৬. চীনা মোরগ
মুরগীর মাংস থেকে নানা ধরনে সুস্বাদু খাবার তৈরী করা যায় যেমন_ •Fried chicken • Chicken soup • Buffalo wings • Tandoori chicken • Butter chicken • Chicken rice
আমাদের দেশে সাধারণত আমরা মুরগীর ডিমে ২ ধরনের রং দেখে অভ্যস্থ light brown আর white। এছাড়াও মুরগীর ডিম deep chocolate brown, off-white, pinkish, even green ও blue কালারের হয় ডিমে প্রচুর পুষ্টি রয়েছে এর মধ্যে Water, Energy, Protein, Carbohydrate, Fat, Inc saturated f.a., Monounsaturated f.a, Polyunsaturated f.a., Cholesterol, Dietary fibre, Sodium, Potassium, Calcium, Phosphorus, Magnesium, Iron, Zinc, Copper, Iodine, Selenium, Chlorine, Sulphur, Vitamin A, Vitamin D, Vitamin E, Vitamin C, Thiamin (B1), Riboflavin (B2), Niacin, Vitamin B6, Folate, Vitamin B12, Biotin, Pantothenic acid । কি পরিমানে রয়েছে জানতে ভিজিট করুন
আমাদের দেশী মুরগী ১০-১২টা বা ১৫টা ডিম দেওয়া পর কুচে লাগে, এসময় এদের শরীর ভারী হয়ে থাকে, রাগ বেড়ে যায় এবং ডিমে উম দেওয়ার জন্য জায়গা খুজতে থাকে, মূলত ডিম পাড়ার স্থানটাকেই এরা নির্বাচন করে
 এর বৈজ্ঞানিক নাম Gallus gallus domesticus আর ইরেজীতে Chicken, Hen, Cock, domesticated fowl নামে পরিচিত

Read More

শৈলবগা

প্রশান্ত শৈলবগা বাংলাদেশের বিরলতম বগা। বর্তমানে শুধু দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব এশিয়াতেই পাখিটির দেখা মেলে। তবে শীত কালে এরা এদেশে সফর করতে আসে। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের শেষ প্রান্তে নুড়ি ও পাথরের সৈকতে প্যারাবন টিকে আছে বলে এখনো সেখানে এর বিচরণের উপযুক্ত পরিবেশ আছে। পর্যাপ্ত আহার পেলে এবং মানুষের হাতে নাজেহাল না হলে প্রতি শীতেই হয়তো এরা এখানে থাকবে। গত ৩০ বছরে তিনবারের বেশি দেখা যায়নি বলে এই বিরল অতিথি বাংলাদেশে ভিআইপির মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। প্রশান্ত শৈলবগা, আমাদের দেশে শীতের অনিয়মিত আগন্তুক।


গ্রীষ্মে এদের পালক ধবধবে সাদা  থাকে, তবে শীতে কালচে রঙের হয়।এ দেশে স্থায়ী বসবাসকারী বগাদের সঙ্গে আকারে-প্রকারে প্রশান্ত শৈলবগার অনেক মিল আছে। অমিলের মধ্যে এই, এর পা আর গলা মামুলি বগার চেয়ে মোটা ও খাটো। তা ছাড়া এর দুটো বর্ণ-পর্ব রয়েছে। এক পর্বে এর পালক সাদা, অন্য পর্বে কালচে।

এর ইংরেজি নাম Pacific Reef Heron, Pacific Reef Egret(প্যাসিফিক রিফ ইগরেট) বা Eastern Reef Egret আর বৈজ্ঞানিক নাম Egretta sacra(আর্ডিয়া সাক্রা), যার অর্থ ‘পবিত্র বগা’।  

Read More

কোকিল

আমাদের দেশীয় কোকিল আর সব দেশের কোকিলের চেয়ে আলাদা। এশীয় কোকিলের ইংরেজী নাম Koel
কোকিল বাংলার একটি সুপরিচিত পাখি। এরা চমৎকার গান গেয়ে বসন্তকালকে মুখরিত করে তোলে। পরনির্ভরশীল পাখির কথা বললে প্রথমেই কোকিলের কথা আসে। কোকিল কখনও বাসা বাঁধে না। এরা অন্য পাখির বাসায় ডিম পাড়ে বিশেষ করে পাতিকাক, বুলবুলি, বাঘাটিকি, বনছাতারে এমনকি বসন্তবৌরির বাসায়ও ডিম পাড়ে। অতি কৌশলে সেখানে গিয়ে দ্রুততার সঙ্গে ডিম পাড়ে। তবে পরজীবী পাখি হলেও বসন্তকালে এদের বিশেষ ডাকের কারণে সবার কাছেই পরিচিত এই পাখি। মাতৃস্নেহবঞ্চিতই থেকে যায় কোকিলছানাদের শৈশব।
মার্চ থেকে জুলাই এদের প্রজনন মাস। পুরুষ পাখি একটি মাত্র শব্দে তীব্র চিৎকারে বারবার ডাকে, 'কো-এল'। কখনো কখনো স্ত্রী পাখিও উত্তরে 'উক-উক-উক' করে। এরা বাসা তৈরি, ডিম ফোটানো এবং ছানার যত্ন নেয় না। পৃথিবীতে এরা একটি মাত্র প্রজাতির পাখি। বাংলাদেশে এরা বিরল নয়। পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, চীনসহ দক্ষিণ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এদের বিস্তৃতি। এরা অভিনব কায়দায় ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার সময় হওয়ার পরও তা অতিরিক্ত সময় পেটে ধরে রাখার অসামান্য সক্ষমতার কারণেই কোকিল অন্য পাখির বাসায় ডিম পাড়তে পারে। ডিম পাড়ার চূড়ান্ত সময় হওয়ার পরও মা কোকিল আরো অতিরিক্ত ২৪ ঘণ্টা সময় তার গর্ভে ডিম ধরে রাখতে পারে। স্বাচ্ছন্দ্যে ডিম পাড়া যায় সে রকম একটি পোষক পাখির উপযুক্ত বাসা কোকিল দম্পতি খুঁজে বের করে। পুরুষ কোকিল আগে থেকেই ডিমের মধ্যে বসা পোষক পাখিটিকে বারবার বিরক্ত করতে থাকে। বাসা থেকে তাড়ানোর জন্য কোকিল চালাকির আশ্রয় নেয়। তারা বাজ পাখিকে নকল করে অন্য পাখিদের ভয় দেখায়। বিরক্তির একপর্যায়ে ডিমে বসে থাকা পাখিটা ওই পুরুষ কোকিলকে ধাওয়া করে।
এই সুযোগে স্ত্রী কোকিল ঝটপট ওই পাখির বাসায় গিয়ে একটা ডিম নিচে ফেলে দিয়ে নিজের একটা ডিম ওখানে পেড়ে আসে। কোকিলের ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার পর পরই অন্য ডিম বা বাচ্চা ফেলে দেয় বাসার মালিক পাখিরা। কালা কোকিল সবচেয়ে বেশি ডিম পাড়ে কাকের বাসায়। কোকিল ও কাকের ডিম পাড়ার সময় এপ্রিল-আগষ্ট মাসে। এ সময় কাকের ডিমে তা দেবার সময়। বাসার চারদিকে পুরুষ কোকিল ঘুরঘুর করে কাককে রাগান্বিত করে। কাক কোকিলকে তাড়া করে আর সে এ সুযোগে মেয়ে কোকিল কাকের বাসায় ডিম পেড়ে আসে। কাক যেন টের না পায় সে জন্য তার কয়েকটি বা সবকটি ডিম ফেলে দিয়ে ডিম পাড়ে। অথবা কাক যখন সামান্য সময়ের জন্য বাসা ছেড়ে যায় তখনই কোকিল ডিম দেয়। বোকা কাক কিছু বুঝতে পারে না। সে নিজের ডিমের সঙ্গে কোকিলের ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়। মজার ব্যাপার হলো, একসময় দেখা যায়, ডিম ফুটে যে ছানা বের হয় সেটি ওই পোষক পাখিটির চেয়ে আকারে অনেক বড়। এর পরও কোকিল ছানাটিকে লালন-পালন করে পোষক পাখিটি। প্রজনন মৌসুমে পোষক পাখিরা বুঝতে পারে না যে এটি অন্য ঘরের ছানা। কোকিলা প্রজনন মৌসুমে বেশি ডাকাডাকি করে। এরা বন, বৃক্ষভূমি, আবাদি জমি, গ্রামাঞ্চল, শহর ও রাস্তার ধারে বিচরণ করে।




Read More

কুটুম পাখি

বাংলাদেশে ৫ প্রজাতির কুটুম পাখি Oriole (Genus: Oriolus) পাখি পাওয়া যায়। এদের মধ্যে ৪ টি পাখিই হলুদ রঙের একটি মেরুন রঙের। চারটি প্রজাতি হলদে রঙের হলেও কালামাথা বেনেবউ বা Black-hooded Oriole সমগ্র বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলে পাওয়া যায়। তাই মুলত এই পাখিটিকেই হলদে পাখি, ইস্টি কুটুম পাখি বা কুটুম পাখি নামে গ্রামের মানুষ বেশী চিনে ও ডাকে।

১) কালাঘাড় বেনেবউ বা Black-naped Oriole

২) ইউরেশীয় সোনাবউ বা Eurasian Golden Oriole

৩) সরুঠোঁট বেনেবউ বা Slender-billed Oriole

৪) তামারঙ বেনেবউ বা Maroon Oriole

৫) কালামাথা বেনেবউ বা Black-hooded Oriole


মাইন রানা

Read More

মুনিয়া

বাংলাদেশে চার জাতের মুনিয়া পাওয়া যায়। এগুলো হল ধলাকোমর মুনিয়া, কালাগলা মুনিয়া, বুটিমুনিয়া, কালামাথা মুনিয়া। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় বুটি মুনিয়া। তিলা মুনিয়ার মাথার থেকে লেজের আগা পর্যন্ত বাদামী। পেটের দিকে কালচে বাদামী ফোঁটা আছে। দূর থেকে দেখলে মোজাইক করা মনে হবে। ঠোঁটটি গাঢ় ধূসর। পা, আঙুল ও নখ নীলচে ধূসর।


মুনিয়ার বাসা বানানোর কৌশল খুবই সুন্দর। ঘাস, লতা-পাতা দিয়ে গোলাকৃতির বাসা বানায় এরা। ৬-৮টি সাদা ডিম পাড়ে।
মুনিয়ার ঝাঁক, খাবার কৌশল, বাসা বানানো দেখাই আজ দূরূহ ব্যাপার। আজকাল প্রকৃতিতে মুনিয়ার দেখা পাওয়াই মুশকিল। চোখের সামনেই দেখা যায়, অনেক বিজ্ঞ ব্যক্তিও শখের বসে মুনিয়া কিনছে। এরই ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রকৃতি থেকে যেমন মুনিয়া ধরছে তেমনি খাঁচার মধ্যেও কৃত্রিমভাবে মুনিয়ার প্রজনন করা হচ্ছে। মুনিয়া পাখির সংসারসহ সমস্ত জীবন প্রণালীই এখন কৃত্রিম। মুনিয়ার কিচির মিচির ডাক এখন গানের সুর নয়, যেন কান্নার সুর।

Read More

ভীমরাজ


ফিঙে পাখির আরেকটি প্রজাতি। ময়না পাখির মত আকার। এদের কপালে একটা ঝুঁটি আছে। লেজের শেষভাগ দিয়ে দুটি লম্বা সরু পালক দুদিকে ঝুলে থাকে। এদের গায়ের রঙ ফিঙেদের মত সম্পূর্ণ কালো।

এরাও পতঙ্গভুক পাখি। বাসা বাধার স্বভাবও ফিঙেদের মত। বনে জঙ্গলে এরা একা একা থাকতে পছন্দ করে। এদের গলার আওয়াজ সুরেলা ও মিষ্টি। অন্যান্য পাখির ডাক ও গান এরা সহজে নকল করতে পারদর্শী।
সাধারণত লোকালয়ে এদেরকে কম দেখা যায়। এদের ইংরেজী নাম Racket tailed Drongo (Dicrurus Paradiseus)

Read More

ঘুঘু

ঘুঘু পায়রা জাতের পাখী। এদের বাগানে, মাঠে ,ঘাটে অবিরত দেখা যায়। গ্রামবাংলায় একসময় চিরপরিচিত পাখি ছিল ঘুঘু। বর্তমান সময়ে ঘুঘু হারিয়ে যেতে বসেছে। বাংলার কৃষকের মাঠের ধান ঘরে ওঠার সময় ঘুঘুর ডাকে চারদিক মুখরিত হয়ে উঠত। তখন ধানের জমিতে ঘুঘু পাখির উত্পাত কৃষকদের আনন্দ দিত। গ্রামের বড় বড় গাছে ঝোপ-জঙ্গল, খেলার মাঠ ও আনাচে-কানাচে এদের দেখা মিলত। সাধারণত জোড়ায় জোড়ায় বা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে বিচরণ করত ঘুঘু পাখি।

বৈজ্ঞানিক নাম-- Streptopelia chinensis । বিশ্বে কলম্বিডি নামের এই পরিবারে পাখি আছে ৩১০ প্রজাতির। আমাদের দেশে প্রজাতির সংখ্যা ১৬। তবে কেবল ঘুঘুই আছে অন্তত ৭ প্রজাতির। বাচ্চা ফুটলে প্রথম দুই-তিন দিন মা ঘুঘুর মুখ থেকে একরকম লালা নিঃসরণ হয়। এটাই ছানার খাদ্য। কবুতরের ক্ষেত্রেও তাই, একে বলে ‘পিজিয়ন মিল্ক’।ডাকের আওয়াজ থেকে নাম "ঘুঘু"।
ঘুঘুর প্রধান খাদ্য ধান ও সরিষা। এছাড়া এসব পাখি ঘাস, আগাছার বিচি, শস্যদানা, গাছের কুঁড়ি ও কচিপাতা খেয়ে থাকে। বর্তমানে ধান চাষে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করায় সেই ধান খেয়ে বিষক্রিয়ায় প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছে ঘুঘুসহ অন্যান্য পাখি। বিরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে প্রজনন ক্ষমতাও কমে যাচ্ছে ঘুঘু পাখির। এখন ঘুঘুর দেখা মিলে কদাচিত্। স্ত্রী ঘুঘু থেকে পুরুষ ঘুঘু দেখতে বেশি সুন্দর। স্ত্রী ঘুঘু পুরুষ ঘুঘুর চেয়ে ছোট। পুরুষ ঘুঘুর মাথা নীলচে-ধূসর, পিঠ ও ডানার পালক গোলাপি-মেরুন, ডানার পেছনের অংশ কালচে এবং বুক ও পেট হালকা হলদে-ধূসর। স্ত্রী পাখির রঙ পুরোপুরি আলাদা। ঘুঘু পাখি সারাবছর প্রজনন করতে পারে। সাধারণত উঁচু গাছের শাখায় ঘাস ও খড়কুটো দিয়ে বাসা বানায়। স্ত্রী পাখি প্রজননের সময় দুটি সাদা রঙের ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার ১২ দিন পর তা থেকে বাচ্চা বের হয়। বাসা বানানো থেকে বাচ্চা পালন করার কাজ স্ত্রী-পুরুষ মিলেমিশে করে। পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে, রাসায়নিক সার ও কীটনাশকযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে এবং ডিম পাড়ার হারও কমে যাচ্ছে। এছাড়া নিরাপদ আশ্রয়ের অভাব, প্রতিনিয়ত ব্যাপকহারে শিকার ও বনজঙ্গলের অভাবে প্রকৃতি থেকে প্রতিদিনই হারিয়ে যাচ্ছে ঘুঘুসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।

Read More

বুলবুলি

বুলবুলি Passeriformes বর্গের Pycnonotidae গোত্রের মাঝারি আকারের অনুজ্জল রঙের পাখি। এদের পালক লম্বা, কমোল ও ফোলানো। বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন বুলবুল, গুয়া লাল আর ইংরেজীতে Bulbul। বাংলাদেশে পিকনোটিডি পরিবারের বুলবুল পাখি আছে ১১ প্রজাতির।

১. হলদে বুলবুল
২. সিপাহী বুলবুল
৩. কালো বুলবুল
৪. বাংলা বুলবুল
৫. সাদাবুক বুলবুলি (Alophoixus flaveolus)
৬. ছাইরঙা বুলবুলি (Hemixos flavala)
৭. সবুজ বুলবুল (Iole virescens)
৮. পাহাড়ে বুলবুলি (H. mcclellandii)
৯. কালো মাথা বুলবুলি (Pycnonotus articeps)
১০. কালো চূড়া বুলবুলি (P. melanicterus)
১১. ঝুটিদার ফিঞ্চচঞ্চু বুলবুলি (Spizixos canifrons)   

এরা গাছের উঁচু ডালে বাসা বাধে না। সাধারণত বাগানের বেড়ার উপর বা দেয়ালে বাসা বানায়। সেখানেই গোলাপীর উপর লাল দাগ দেয়া ২ থেকে ৫টি ডিম পাড়ে। ডিমে তা দেয়ার সময় লেজ আর মুখ থাকে বাসার বাইরে। নিচু ঝোপে বাসা থাকার কারনে বেজি, সাপ, গিরগিটি প্রায়ই তাদের ডিমগুলো নষ্ট করে ফেলে। তাতে অবশ্য তারা দমে যায় না। বছরে তিন চার বার ডিম দেয়।

পাকা ফল, ফুলের কুড়ি এদের প্রিয় খাবার।

Read More

ডাহুক


ডাহুক জলের পাখি। খুব ভীরু। জলাভূমির আশেপাশের ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে থাকা এই পাখিটি মাঝারি সাইজের।লাজুক স্বভাবের-মানুষের সাড়া পেলেই লুকিয়ে পড়ে।লেজ ছোট।পা লম্বা। পায়ের আঙুলও বেশ লম্বা। পিঠের রঙ ধূসর (ফ্যাকাশে কালো) থেকে খয়েরী-কালো, মাথা ও বুক সাদা। লেজের নীচের অংশে লালচে আভা। ঠোট হলুদ রঙের, ঠোটের উপরে লাল রঙের একটি ছোট্ট দাগ আছে। ডাহুক খুব সুন্দর একটি পাখি। জল এদের প্রধান আশ্রয়। পুকুর, খাল, জলাভূমি, বিল, নদীর গোপন লুকানো জায়গা এদের খুব প্রিয়।
ডাহুক অনেক সময় পোষও মানে। এই অনুগত পোষা পাখিটি দিয়ে অনেকে বুনো ডাহুকও শিকার করে।
মাটিতে, ঝোপের তলায় এরা বাসা তৈরি করে। আষাঢ়- শ্রাবন মাস এদের প্রজননকাল। জলাশয়ের ধারে ঝোপের মধ্যে এরা বাসা বানায়। ৬-৭টি ডিম পাড়ে। ডিমের রঙ ফিকে হলুদ বা গোলাপি মেশানো সাদা। স্বামী স্ত্রী মিলে ডিম তা দেয়। তবে অদ্ভুত ব্যাপার হল এ পাখির বাচ্চাগুলো কালো রঙের। পোকামাকড়, শামুক, উদ্ভিদের ডগা, শস্যদানা এদের প্রিয় খাবার। তবে বাচ্চার খাবার গ্রহণের সময় ঘটে সবচেয়ে মজার ঘটনা। অন্য বেশিরভাগ পাখিরা তাদের বাচ্চাকে মুখে তুলে খাইয়ে দেয়। কিন্তু মা ডাহুকী কখনও বাচ্চাদের তুলে খাওয়ায় না। রাতে ডাহুকের 'কোয়াক' 'কোয়াক' ডাক শুনে সহজেই একে চিনতে পারা যায়। এই ডাক পুরুষ পাখির,যা বর্ষাকালে বেশি শোনা যায়।একটানা অনেকক্ষণ ডেকে শ্বাস নেয়। ডাহুক এর স্ত্রী প্রতিশব্দ ডাহুকি। ডাহুক বাংলাদেশের একটি বিপন্ন পাখি। একে এখন অতটা আর দেখা যায়না।
তাহলে কীভাবে খায় ওরা? ডিম থেকে বাচ্চা বের হবার সাথে সাথে প্রাকৃতিক নিয়মেই বাচ্চাগুলো ২০ ফিট উঁচু থেকে লাফ দিয়ে নামে মাটিতে। শরীরটা পাতলা বলে লাফ দিয়ে মাটিতে পড়লেও তাদের কিছুই হয় না। মাটিতে নেমেই বাচ্চাগুলো মা বাবার পিছনে পিছনে হেঁটে হেঁটে খাবার খুঁটে খুঁটে খায়।

এর ইংরেজী White-breasted Waterhen আর বৈজ্ঞানিক নাম Amaurornis phoenicurus।

Read More

ফিঙে

কালো রঙের পাখি। বুলবুলি পাখির মত আকার। তবে এর দেহের সমস্তটা উজ্জ্বল কালো রঙের, তার উপর নীলের আভা। এদের লম্বা লেজটির মাঝখানে চেরা। দূর থেকে দেখলেও অনায়াসে চেনা যায়। এরা পতঙ্গভুক। উড়ে উড়ে পোকা শিকার করে। লম্বা গাছের ডালে গরমকালে ফিঙে বাসা বানায়। ঘাস ও কাঠি দিয়ে। বাড়ির নিরাপত্তার প্রশ্নে এই ফিঙে কারও সাথে আপোষ করে না। কাকের সাথে প্রায়ই ঝগড়ায় লিপ্ত থাকতে দেখা যায়। গ্রামাঞ্চলে এদের বেশি দেখা যায়। শহরেও মাঝে মাঝে চোখে পড়ে। বাংলাদেশের সর্বত্র এই ফিঙে দেখা যায়। এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Black Drongo আর বৈজ্ঞানিক নাম Dicrurous Adsimilis।
ফিঙে ছোট পাখি হলে কী হবে অনেক বড় পাখিদের চেয়েও তার সাহস অনেক বেশি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ফিঙে তার চাইতে বড় পাখি যেমন-কাক, চিল, বাজ, পেঁচা এমনকি শকুনকেও আক্রমন করে। এদের চলাফেরায় কেউ ঝামেলা পাকালেই কিছুতেই সে ছাড় দেয় না। এ স্বভাবটা ফিঙের বেশি দেখা যায় প্রজননকালে। এসময় তার বাসার চারপাশে কাউকেই পাখিটি সহ্য করতে পারে না। কিছু কিছু শান্ত, নিরীহ পাখি আছে যারা ফিঙে যে গাছে বাসা বানায় সে গাছেই নিজেদের নিরাপত্তার জন্য বাসা বানায়। এসব গুণ আর বাহাদুরির জন্যই মনে হয় অনেকেই ফিঙেকে পাখির রাজা বলে।
ফিঙের প্রজননকাল ফেব্রুয়ারি-আগষ্ট মাসে শুরু হয়। এ সময় এরা দু’ডালের মাঝখানে নরম ঘাস, লতাপাতা দিয়ে বাসা বানায়। ৩-৪টি বাদামী ফোঁটাযুক্ত ডিম পারে। স্বামী-স্ত্রী একত্রে মিলে সংসার দেখাশুনা করে।
ফিঙে করভিডি পরিবারের গায়ক পাখি। মিষ্টি সুরে ডাকার পাশাপাশি এরা কর্কশ কন্ঠেও ডাকে। এদের নকল ডাকের অভ্যাসও আছে। ফিঙেকে অনেক এলাকায় ফিচকা, ফিঙা, ধেথচুয়া,রাজাপাখি এমনকি ডাকাতপাখি নামেও চেনে।

Read More

দুধরাজ

বুলবুলি পাখির মত আকার। কিন্তু সাদা লেজটা অনেক লম্বা। পুরুষ পাখির গায়ের রঙ ধবধবে সাদা। মাথা ও ঝুঁটির রঙ গাঢ় নীল।গলার নিচ থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত দুধের মতোই শ্বেতশুভ্র। পেটও সাদা। পাখার নিচে কালো রেখা, শেষদিকে অল্প কালো ছোপ। বুক থেকে শুরু করে গলা, মাথা তেলচকচকে কালো। মাথায় এক দর্শনীয় চূড়া। একটু বাঁকানো নীলচে রঙের তীক্ষ ঠোঁট। চোখের মণিও নীলচে, কেন্দ্রে সূক্ষ্ম সাদা বিন্দু। পা হালকা লালচে। কিন্তু স্ত্রী পাখি ও অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির গায়ের রঙ বাদামী। স্ত্রী পাখির লম্বা লেজ নেই। দুধরাজের বিশেষ বৈশিষ্ট্য এর লেজের এই দুটি শুভ্র পালক। ঠোঁট থেকে সাধারণ লেজ পর্যন্ত এর মাপ প্রায় ১৯ থেকে ২১ সেন্টিমিটার। আর লেজের শেষ প্রান্ত থেকে লম্বা পালক দুটির দৈর্ঘ্য ২১ থেকে ২৪ সেন্টিমিটার। ওড়ার সময় পালক দুটি বাতাসে অনুপম ভঙ্গিতে আন্দোলিত হতে থাকে। ডালে বসে থাকার সময় বেঁকে থাকে।মেয়ে দুধরাজের লেজের এই বাড়তি পালক দুটো থাকে না বলে এরা পুরুষ দুধরাজের মতো এতটা সুদর্শন নয়। জোড় বেঁধে থাকে। বিভিন্নরকম কীটপতঙ্গ এদের প্রিয় খাবার। উড়ে উড়ে এরা পতঙ্গ শিকার করে। এরা উড়ন্ত পোকামাকড় ধরতে সুনিপুণ। সেগুলোই এদের খাদ্য।

বর্ষাকালের প্রথম দিকে গাছের ডালে সরু খড়কুটো দিয়ে এরা লম্বা ফানেলের মতো বাসা বানায়। দুধরাজ পাখি সাধারণত জোড়ায় জোড়ায় থাকে। ডিম দেয় তিন থেকে পাঁচটি। সবগুলো ডিম ফোটে না। যেগুলো ফোটে তার সব বাচ্চাও বাঁচে না। এদের ছানার মৃত্যুর হার অন্যদের চেয়ে বেশি। সে কারণে দুধরাজের সংখ্যা বরাবরই কম। পাহাড়ি অঞ্চলে তেমন নেই। সুন্দরবনে যথেষ্ট আছে। আছে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও। উঁচু গাছে খাড়াভাবে বসে এবং এ ডাল থেকে ও ডাল ছুটোছুটি করে বেড়ায় লম্বা লেজটি নিয়ে। এরা নাকি সুরে 'চে' অথবা 'চেচেওয়ে' করে ডাকে।


এর ইংরেজী নাম Paradise Flycatcher আর বৈজ্ঞানিক নাম Terpsiphone paradisi।
ঢাকা শহরে দুধরাজের দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য। রুক্ষ ঘিঞ্জি এলাকা এর পছন্দ নয়। কচিৎ মিরপুরের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের বাঁশমহালে এর দেখা মেলে। বাঁশঝাড়ই এর প্রিয় ঠাঁই। গ্রামের ঘন গাছগাছালি সন্নিবেশিত বনজঙ্গলে তাদের নিবাস। সাধারণত একটু উঁচু দিয়ে ওড়ে। খুব সতর্ক এর চলাফেরা। ফলে সচরাচর চোখে পড়ে না। তবে সারা দেশেই দুধরাজ বেশ ভালোই আছে। এরা বিপন্ন নয়।
শুধু রূপ দিয়ে তো চলে না, কঠিন দুনিয়ায় বাঁচতে হলে বুদ্ধি আর সাহসও থাকা চাই। তা পর্যাপ্ত আছে দুধরাজের। শত্রুভাবাপন্ন কেউ বাসার ধারেপাশে এলে যেন বাজ, ফিঙে বা অনেক বড় পাখিকেও এরা তাড়িয়ে বেড়ায়। সে কারণে অনেক নিরীহ পাখি এদের বাসার কাছে বাসা তৈরি করে।
হঠাৎ যদি এমন একটি লম্বা লেজওয়ালা মরিচা লাল রঙের পাখি চোখে পড়ে, তাহলেও বিভ্রান্ত হওয়ার কারণ নেই। সেটি নবীন দুধরাজ। ডিম থেকে ফোটার পর হালকা গোলাপিই থাকে এদের রং। শৈশব-কৈশোর পেরিয়ে যখন সে যুবক, তখন বদলে যায় রং। সাদা-কালোয় হয়ে ওঠে স্বর্গীয় কান্তিমান। সময় লেগে যায় আড়াই থেকে তিন বছর। গড়পড়তা ১০-১২ বছরের জীবন দুধরাজের, তারপর স্বর্গের পাখির স্বর্গের দিকে যাত্রা।

Read More

শামুকখোল বা শামুকভাঙ্গা

জীবজগতের একটা বিরাট অংশ গোটা পৃথিবী থেকেই খুব দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশের বিপন্ন পশু-পাখির মধ্যে শামুকখোল অন্যতম। শামুকখোলের মত বড় পাখিদের জন্য বেশী খাবার দরকার আর সেই সাথে বাসা বানাবার জন্য চাই বেশ পুরাতন লম্বা গাছ যা বড় পাখিদের কাছে বেশ দুর্লভ হয়ে পড়েছে। এক সময় বাংলাদেশের সব জায়গায় শামুকখোল দেখা যেতো। শুধু শামুক-ঝিনুক খেয়েই বেঁচে থাকতে পারে এরা। শামুকের প্রতি আসক্তির কারণেই বাংলার মানুষ তার নাম দিয়েছিল শামুকভাঙ্গা, শামুকখোর, শামুকখোল কিম্বা শামখোল।


এখন বাংলাদেশের কয়েকটি এলাকায় এর বড় বড় কলোনি দেখা যায়। এদের মধ্যে নাটোরের পচামারিয়ায় প্রায় এক হাজারের মত একটি বড় কলোনিকে রাত কাটাতে দেখা যায়। পচামারিয়া ছাড়াও রাজশাহীর দুর্গাপুর, নওগাঁর সান্তাহার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটের পাখিবাড়ি, শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওড়ে আর কুলাউড়ার হাকালুকি হাওড়েও দেখা মেলে। পাখি দেখিয়েদের মতে,সব মিলিয়ে আমাদের দেশে শামখোলের মোট সংখ্যা তিন হাজারের বেশী হবে না।
শামখোল বেশ ঢ্যাঙ্গা আর বড়সড় পাখি। পানিতে হেঁটে বেড়াবার জন্যে লম্বা পা আছে বলে মাটি থেকে তার উচ্চতা আড়াই ফুট পর্যন্ত হয়। ছড়ানো দুই ডানার মাপ তিন ফুটের কম হবে না। দুই চঞ্চুর মধ্যে একটা বড় ফাঁক থাকায় বড় অদ্ভুত দেখায় শামখোলের ঠোঁট।

শামখোলের ইংরিজি নাম ওপেন-বিল, যার অর্থ খোলাঠোঁট। শামখোলের বৈজ্ঞানিক নামটা আরো মজার- অ্যানাস্টোমাস অসিট্যান্স - যার মানে ‘হাই-তোলা মুখ’। শামখোলের খোলা ঠোঁটের রহস্যের মতই তার কিছু কিছু আচরণেরও ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না।
একবার আংটি-পরানো এক শামখোল-ছানাকে থাইল্যান্ডে তার বাসা ছেড়ে বিদায় হবার কয়েক দিনের মধ্যেই ১৫০০ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশে পাওয়া গেল। শামখোল সাধারণত দূর-পাল্লার পরিব্রাজক নয়। তাই ঐ ছানাটির বাংলাদেশ সফরের রহস্য আজও ব্যাখ্যা করা যায়নি।
এক হিসেবে দেখা গেছে, পৃথিবীতে এখন মাত্র এক লক্ষ শামখোল টিকে আছে। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান আর শ্রীলঙ্কাই তাদের শেষ আশ্রয়। বাংলাদেশ আর শ্রীলঙ্কায় এখন শামখোলের কোন প্রজননভূমি নেই। ভারতের প্রজননভূমিতেও প্রচন্ড খরার জন্যে কোন কোন বছর শামখোলের প্রজনন বন্ধ থাকে।
এর ইংরেজী নাম Asian Openbill বা Asian Openbill Stork আর বৈজ্ঞানিক নাম Anastomus oscitans।

Read More

সেঁকড়া বসন্ত

সেঁকড়া বসন্ত টুক্‌-টুক্‌-টুক্‌ শব্দ করে এমন ভাবে ডাকে যেন কামার লৌহার উপর হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছে। প্রায় সারা দিনভর এরা ডেকে চলে। আর দুপুরের নির্জনতা ভাঙ্গতে এদের তো এদের জুড়িই নেই। ঘন ঘন ডাকের কারনে এদের কাঁসারীও বলা হয়। অবিরাম ডাকের পাখি হলেও শীতে এরা ডাকে খুবই কম। তাই চোখেও পড়ে কম।
সেঁকড়া বসন্ত উষ্ণমন্ডলীয় পাখি। বাংলাদেশে মোট ৫ প্রজাতির বসন্ত দেখা মেলে। এদের মধ্যে সেঁকড়া বসন্ত দেশের সব জায়গায় আছে বলেই ধরা হয়।
সেঁকড়া বসন্ত খুবই উজ্জ্বল রঙয়ের একটি পাখি। এদের কপালের লাল দাগটা দেখলে মনে হবে কেউ যেন সিঁদুর পড়ে দিয়েছে। বুকটাও লাল। বুক থেকে নিচের দিকটা সোনালী হলুদ, চঞ্চু কালো, লেজের শেষ প্রান্ত সবুজাভ নীল। এরা গাছের পাতার মধ্যে আহার ও প্রেমপর্ব সারে। মাটিতে নামে না। বট-পাকুরের ফল এদের প্রধান খাদ্য। তবে উঁইপোকা ধরে খাবার স্বভাবটাও চোখে পড়ে।

Read More

শ্বেত সরালী

শীতের শুরুতেই আমাদের দেশের বড় বড় নিরাপদ জলাশয়গুলোতে সরালীর পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে। বাংলাদেশে সাধারণত দু’ধরণের সরালী দেখা যায়। ছোট সরালী ও বড় সরালী। এদের মধ্যে ছোট সরালীই আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশী দেখা যায়। সরালীকেই আমাদের দেশের বেশীরভাগ লোক অতিথি পাখি হিসেবে ভুল করে। আমাদের মিডিয়াগুলো ফলাওভাবে অথিতি পাখি হিসেবে প্রচার করে। আসলে সরালী অতিথি পাখি নয়। এরা একেবারেই আমাদের দেশীয় পাখি। শীতকালে এরা কলোনি বেঁধে থাকে। একসঙ্গে খাবারের সন্ধানে এরা সন্ধ্যায় বেরিয়ে পড়ে। আবার ভোর হতে না হতেই ফিরে আসে শিস দিতে দিতে। এদের প্রিয় খাবারের তালিকায় থাকে উদ্ভিদের কচি ডগা, ফলমূল, শ্যাওলা, শামুক, ছোট মাছ ও ব্যাঙ। বর্ষাকালে এরা জোড়ায় জোড়ায় থাকে। কারণ এসময় এদের বাসা বানাবার সময়। শীতকালে মিরপুর চিড়িয়াখানা, জাবি ক্যাম্পাস, বঙ্গভবন পুকুর, বিএলআরএ, মুন্সিগঞ্জের ইন্দ্রকপুর, দেশের বিভিন্ন বিল, হাওড়-বাওড়, নদী-নালা, খালে এদের ঝাঁকে ঝাঁকে দল বেঁধে থাকতে দেখা যায়। ছোটখাটো ধরণের এ পাখিটি লম্বায় প্রায় ৪০সেমির মত। সরালীর মত ছোট বাদামী রঙের হাঁস আমাদের দেশে নেই বললেই চলে। লেজের উপরিভাগের পালকগুলো চেস্টনাট, মাথার টুপিটি গাঢ় বাদামী। পা ও ঠোঁট কালো। সরালী ৭-১০টি ডিম পাড়ে। ডিমের রঙ সাদা। তবে ডিমে তা দেওয়ার পর ফ্যাকাসে বাদামি রঙ ধারণ করে। গত ক’বছর ধরে দু’একটি সরালীর জোড়া জাবি ক্যাম্পাসে বাচ্চা ফোটাচ্ছে। শ্বেত বা অ্যালবিনো সরালী দেখা খুবই বিরল একটা ঘটনা।


এদের ইংরেজী নাম Lesser Whistling Teal ও দ্বীপদি নাম Dendrocygna javanica।

Read More

ময়ুর

ভারতীয় ময়ুরই আমাদের কাছে ময়ুর। অদ্ভুত সুন্দর এ পাখিটির একটি নমুনাও আর এ দেশের প্রকৃতিতে বেঁচে নেই। অথচ ৭০-৮০ বছর আগেও ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর এলাকায় মহানন্দে ঘুরে বেড়াত এরা। বাংলাদেশে সব শেষ ভারতীয় ময়ুর দেখা গেছে আশির দশকের গোড়ার দিকে, ঢাকার শ্রীপুরের শালবনে। চট্টগ্রাম আর পার্বত্য চট্টগ্রামের গহিন অরণ্যে ছিল বর্মি ময়ুরের বাস। সম্ভবত এরাও বিলুপ্ত হয়েছে। ময়ুর ফিজিয়ানিডি পরিবারের পাভো বর্গের অন্তর্ভুক্ত ফিজ্যান্ট-জাতীয় পাখি । সাধারণত বনে বাস করে এবং মাটিতে বাসা বাঁধে।তবে মাঝে মাঝে লোকালয়েও দেখা যায়। বিশেষ করে সংরক্ষিত এলাকায় এরা মানুষের খুব কাছে চলে আসে। এরা সর্বভূক। চারা গাছের অংশ, কীটপতঙ্গ, বীজের খোসা, ফুলের পাপড়ি এবং ছোট ছোট সন্ধিপদ প্রাণি খায়। ডিম ফুটে বাচ্চা দেয়। ছোট বাচ্চাগুলো মুরগির বাচ্চার মতই মায়ের সাথে ঘুরে ঘুরে খাবার খায়। বিপদ দেখলেই মায়ের ডানার নিচে এসে লুকায়। ছোট বাচ্চারা মুরগির বাচ্চার মতই মায়ের পালকের আড়ালে, আবার কখনবা পিঠের উপর লাফিয়ে ওঠে।
সামনেরটা মেয়ে, পিছনেরটা পুরুষ
পুরুষ ময়ূরগুলোর পেখম থাকে, মেয়েগুলোর থাকেনা।স্ত্রী ময়ূরকে আকৃষ্ট করার জন্য পুরুষ ময়ূর পেখম তোলে। এ কারণেই এরা অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ময়ূরের ইংরেজী নাম Peafowl তবে পুরুষ ময়ুরগুলোকে peacock বলে আর স্ত্রীগুলোকে peahen বা female peacock বলে। বেশ কয়েক ধরণের ময়ূর দেখা যায়। যেমন_
১. দেশি ময়ূরঃ Indian Peafowl(Pavo cristatus)  
২. সবুজ ময়ুরঃ Green Peafowl (Pavo muticus)
৩. সাদা ময়ূরঃ White Peafowl
৪. বর্মী ময়ূরঃ Burmese Peacock Softshell (Nilssonia formosa)
৫।কাঠ ময়ূরঃ Wooden Peacock (Polyplectron bicalcaratum)
৬। মথুরা বা কালো ময়ূরঃ Black Peafowl (Lophura leucomelanos)

Read More