9.1.10
কোকিল
আমাদের দেশীয় কোকিল আর সব দেশের কোকিলের চেয়ে আলাদা। এশীয় কোকিলের ইংরেজী নাম Koelকোকিল বাংলার একটি সুপরিচিত পাখি। এরা চমৎকার গান গেয়ে বসন্তকালকে মুখরিত করে তোলে। পরনির্ভরশীল পাখির কথা বললে প্রথমেই কোকিলের কথা আসে। কোকিল কখনও বাসা বাঁধে না। এরা অন্য পাখির বাসায় ডিম পাড়ে বিশেষ করে পাতিকাক, বুলবুলি, বাঘাটিকি, বনছাতারে এমনকি বসন্তবৌরির বাসায়ও ডিম পাড়ে। অতি কৌশলে সেখানে গিয়ে দ্রুততার সঙ্গে ডিম পাড়ে। তবে পরজীবী পাখি হলেও বসন্তকালে এদের বিশেষ ডাকের কারণে সবার কাছেই পরিচিত এই পাখি। মাতৃস্নেহবঞ্চিতই থেকে যায় কোকিলছানাদের শৈশব।
মার্চ থেকে জুলাই এদের প্রজনন মাস। পুরুষ পাখি একটি মাত্র শব্দে তীব্র চিৎকারে বারবার ডাকে, 'কো-এল'। কখনো কখনো স্ত্রী পাখিও উত্তরে 'উক-উক-উক' করে। এরা বাসা তৈরি, ডিম ফোটানো এবং ছানার যত্ন নেয় না। পৃথিবীতে এরা একটি মাত্র প্রজাতির পাখি। বাংলাদেশে এরা বিরল নয়। পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, চীনসহ দক্ষিণ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এদের বিস্তৃতি। এরা অভিনব কায়দায় ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার সময় হওয়ার পরও তা অতিরিক্ত সময় পেটে ধরে রাখার অসামান্য সক্ষমতার কারণেই কোকিল অন্য পাখির বাসায় ডিম পাড়তে পারে। ডিম পাড়ার চূড়ান্ত সময় হওয়ার পরও মা কোকিল আরো অতিরিক্ত ২৪ ঘণ্টা সময় তার গর্ভে ডিম ধরে রাখতে পারে। স্বাচ্ছন্দ্যে ডিম পাড়া যায় সে রকম একটি পোষক পাখির উপযুক্ত বাসা কোকিল দম্পতি খুঁজে বের করে। পুরুষ কোকিল আগে থেকেই ডিমের মধ্যে বসা পোষক পাখিটিকে বারবার বিরক্ত করতে থাকে। বাসা থেকে তাড়ানোর জন্য কোকিল চালাকির আশ্রয় নেয়। তারা বাজ পাখিকে নকল করে অন্য পাখিদের ভয় দেখায়। বিরক্তির একপর্যায়ে ডিমে বসে থাকা পাখিটা ওই পুরুষ কোকিলকে ধাওয়া করে।
এই সুযোগে স্ত্রী কোকিল ঝটপট ওই পাখির বাসায় গিয়ে একটা ডিম নিচে ফেলে দিয়ে নিজের একটা ডিম ওখানে পেড়ে আসে। কোকিলের ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার পর পরই অন্য ডিম বা বাচ্চা ফেলে দেয় বাসার মালিক পাখিরা। কালা কোকিল সবচেয়ে বেশি ডিম পাড়ে কাকের বাসায়। কোকিল ও কাকের ডিম পাড়ার সময় এপ্রিল-আগষ্ট মাসে। এ সময় কাকের ডিমে তা দেবার সময়। বাসার চারদিকে পুরুষ কোকিল ঘুরঘুর করে কাককে রাগান্বিত করে। কাক কোকিলকে তাড়া করে আর সে এ সুযোগে মেয়ে কোকিল কাকের বাসায় ডিম পেড়ে আসে। কাক যেন টের না পায় সে জন্য তার কয়েকটি বা সবকটি ডিম ফেলে দিয়ে ডিম পাড়ে। অথবা কাক যখন সামান্য সময়ের জন্য বাসা ছেড়ে যায় তখনই কোকিল ডিম দেয়। বোকা কাক কিছু বুঝতে পারে না। সে নিজের ডিমের সঙ্গে কোকিলের ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়। মজার ব্যাপার হলো, একসময় দেখা যায়, ডিম ফুটে যে ছানা বের হয় সেটি ওই পোষক পাখিটির চেয়ে আকারে অনেক বড়। এর পরও কোকিল ছানাটিকে লালন-পালন করে পোষক পাখিটি। প্রজনন মৌসুমে পোষক পাখিরা বুঝতে পারে না যে এটি অন্য ঘরের ছানা। কোকিলা প্রজনন মৌসুমে বেশি ডাকাডাকি করে। এরা বন, বৃক্ষভূমি, আবাদি জমি, গ্রামাঞ্চল, শহর ও রাস্তার ধারে বিচরণ করে।
0 comments:
Post a Comment