9.1.10

শামুকখোল বা শামুকভাঙ্গা

জীবজগতের একটা বিরাট অংশ গোটা পৃথিবী থেকেই খুব দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশের বিপন্ন পশু-পাখির মধ্যে শামুকখোল অন্যতম। শামুকখোলের মত বড় পাখিদের জন্য বেশী খাবার দরকার আর সেই সাথে বাসা বানাবার জন্য চাই বেশ পুরাতন লম্বা গাছ যা বড় পাখিদের কাছে বেশ দুর্লভ হয়ে পড়েছে। এক সময় বাংলাদেশের সব জায়গায় শামুকখোল দেখা যেতো। শুধু শামুক-ঝিনুক খেয়েই বেঁচে থাকতে পারে এরা। শামুকের প্রতি আসক্তির কারণেই বাংলার মানুষ তার নাম দিয়েছিল শামুকভাঙ্গা, শামুকখোর, শামুকখোল কিম্বা শামখোল।


এখন বাংলাদেশের কয়েকটি এলাকায় এর বড় বড় কলোনি দেখা যায়। এদের মধ্যে নাটোরের পচামারিয়ায় প্রায় এক হাজারের মত একটি বড় কলোনিকে রাত কাটাতে দেখা যায়। পচামারিয়া ছাড়াও রাজশাহীর দুর্গাপুর, নওগাঁর সান্তাহার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটের পাখিবাড়ি, শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওড়ে আর কুলাউড়ার হাকালুকি হাওড়েও দেখা মেলে। পাখি দেখিয়েদের মতে,সব মিলিয়ে আমাদের দেশে শামখোলের মোট সংখ্যা তিন হাজারের বেশী হবে না।
শামখোল বেশ ঢ্যাঙ্গা আর বড়সড় পাখি। পানিতে হেঁটে বেড়াবার জন্যে লম্বা পা আছে বলে মাটি থেকে তার উচ্চতা আড়াই ফুট পর্যন্ত হয়। ছড়ানো দুই ডানার মাপ তিন ফুটের কম হবে না। দুই চঞ্চুর মধ্যে একটা বড় ফাঁক থাকায় বড় অদ্ভুত দেখায় শামখোলের ঠোঁট।

শামখোলের ইংরিজি নাম ওপেন-বিল, যার অর্থ খোলাঠোঁট। শামখোলের বৈজ্ঞানিক নামটা আরো মজার- অ্যানাস্টোমাস অসিট্যান্স - যার মানে ‘হাই-তোলা মুখ’। শামখোলের খোলা ঠোঁটের রহস্যের মতই তার কিছু কিছু আচরণেরও ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না।
একবার আংটি-পরানো এক শামখোল-ছানাকে থাইল্যান্ডে তার বাসা ছেড়ে বিদায় হবার কয়েক দিনের মধ্যেই ১৫০০ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশে পাওয়া গেল। শামখোল সাধারণত দূর-পাল্লার পরিব্রাজক নয়। তাই ঐ ছানাটির বাংলাদেশ সফরের রহস্য আজও ব্যাখ্যা করা যায়নি।
এক হিসেবে দেখা গেছে, পৃথিবীতে এখন মাত্র এক লক্ষ শামখোল টিকে আছে। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান আর শ্রীলঙ্কাই তাদের শেষ আশ্রয়। বাংলাদেশ আর শ্রীলঙ্কায় এখন শামখোলের কোন প্রজননভূমি নেই। ভারতের প্রজননভূমিতেও প্রচন্ড খরার জন্যে কোন কোন বছর শামখোলের প্রজনন বন্ধ থাকে।
এর ইংরেজী নাম Asian Openbill বা Asian Openbill Stork আর বৈজ্ঞানিক নাম Anastomus oscitans।

0 comments:

Post a Comment