9.1.10

দুধরাজ

বুলবুলি পাখির মত আকার। কিন্তু সাদা লেজটা অনেক লম্বা। পুরুষ পাখির গায়ের রঙ ধবধবে সাদা। মাথা ও ঝুঁটির রঙ গাঢ় নীল।গলার নিচ থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত দুধের মতোই শ্বেতশুভ্র। পেটও সাদা। পাখার নিচে কালো রেখা, শেষদিকে অল্প কালো ছোপ। বুক থেকে শুরু করে গলা, মাথা তেলচকচকে কালো। মাথায় এক দর্শনীয় চূড়া। একটু বাঁকানো নীলচে রঙের তীক্ষ ঠোঁট। চোখের মণিও নীলচে, কেন্দ্রে সূক্ষ্ম সাদা বিন্দু। পা হালকা লালচে। কিন্তু স্ত্রী পাখি ও অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির গায়ের রঙ বাদামী। স্ত্রী পাখির লম্বা লেজ নেই। দুধরাজের বিশেষ বৈশিষ্ট্য এর লেজের এই দুটি শুভ্র পালক। ঠোঁট থেকে সাধারণ লেজ পর্যন্ত এর মাপ প্রায় ১৯ থেকে ২১ সেন্টিমিটার। আর লেজের শেষ প্রান্ত থেকে লম্বা পালক দুটির দৈর্ঘ্য ২১ থেকে ২৪ সেন্টিমিটার। ওড়ার সময় পালক দুটি বাতাসে অনুপম ভঙ্গিতে আন্দোলিত হতে থাকে। ডালে বসে থাকার সময় বেঁকে থাকে।মেয়ে দুধরাজের লেজের এই বাড়তি পালক দুটো থাকে না বলে এরা পুরুষ দুধরাজের মতো এতটা সুদর্শন নয়। জোড় বেঁধে থাকে। বিভিন্নরকম কীটপতঙ্গ এদের প্রিয় খাবার। উড়ে উড়ে এরা পতঙ্গ শিকার করে। এরা উড়ন্ত পোকামাকড় ধরতে সুনিপুণ। সেগুলোই এদের খাদ্য।

বর্ষাকালের প্রথম দিকে গাছের ডালে সরু খড়কুটো দিয়ে এরা লম্বা ফানেলের মতো বাসা বানায়। দুধরাজ পাখি সাধারণত জোড়ায় জোড়ায় থাকে। ডিম দেয় তিন থেকে পাঁচটি। সবগুলো ডিম ফোটে না। যেগুলো ফোটে তার সব বাচ্চাও বাঁচে না। এদের ছানার মৃত্যুর হার অন্যদের চেয়ে বেশি। সে কারণে দুধরাজের সংখ্যা বরাবরই কম। পাহাড়ি অঞ্চলে তেমন নেই। সুন্দরবনে যথেষ্ট আছে। আছে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও। উঁচু গাছে খাড়াভাবে বসে এবং এ ডাল থেকে ও ডাল ছুটোছুটি করে বেড়ায় লম্বা লেজটি নিয়ে। এরা নাকি সুরে 'চে' অথবা 'চেচেওয়ে' করে ডাকে।


এর ইংরেজী নাম Paradise Flycatcher আর বৈজ্ঞানিক নাম Terpsiphone paradisi।
ঢাকা শহরে দুধরাজের দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য। রুক্ষ ঘিঞ্জি এলাকা এর পছন্দ নয়। কচিৎ মিরপুরের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের বাঁশমহালে এর দেখা মেলে। বাঁশঝাড়ই এর প্রিয় ঠাঁই। গ্রামের ঘন গাছগাছালি সন্নিবেশিত বনজঙ্গলে তাদের নিবাস। সাধারণত একটু উঁচু দিয়ে ওড়ে। খুব সতর্ক এর চলাফেরা। ফলে সচরাচর চোখে পড়ে না। তবে সারা দেশেই দুধরাজ বেশ ভালোই আছে। এরা বিপন্ন নয়।
শুধু রূপ দিয়ে তো চলে না, কঠিন দুনিয়ায় বাঁচতে হলে বুদ্ধি আর সাহসও থাকা চাই। তা পর্যাপ্ত আছে দুধরাজের। শত্রুভাবাপন্ন কেউ বাসার ধারেপাশে এলে যেন বাজ, ফিঙে বা অনেক বড় পাখিকেও এরা তাড়িয়ে বেড়ায়। সে কারণে অনেক নিরীহ পাখি এদের বাসার কাছে বাসা তৈরি করে।
হঠাৎ যদি এমন একটি লম্বা লেজওয়ালা মরিচা লাল রঙের পাখি চোখে পড়ে, তাহলেও বিভ্রান্ত হওয়ার কারণ নেই। সেটি নবীন দুধরাজ। ডিম থেকে ফোটার পর হালকা গোলাপিই থাকে এদের রং। শৈশব-কৈশোর পেরিয়ে যখন সে যুবক, তখন বদলে যায় রং। সাদা-কালোয় হয়ে ওঠে স্বর্গীয় কান্তিমান। সময় লেগে যায় আড়াই থেকে তিন বছর। গড়পড়তা ১০-১২ বছরের জীবন দুধরাজের, তারপর স্বর্গের পাখির স্বর্গের দিকে যাত্রা।

0 comments:

Post a Comment