9.1.10

ঘুঘু

ঘুঘু পায়রা জাতের পাখী। এদের বাগানে, মাঠে ,ঘাটে অবিরত দেখা যায়। গ্রামবাংলায় একসময় চিরপরিচিত পাখি ছিল ঘুঘু। বর্তমান সময়ে ঘুঘু হারিয়ে যেতে বসেছে। বাংলার কৃষকের মাঠের ধান ঘরে ওঠার সময় ঘুঘুর ডাকে চারদিক মুখরিত হয়ে উঠত। তখন ধানের জমিতে ঘুঘু পাখির উত্পাত কৃষকদের আনন্দ দিত। গ্রামের বড় বড় গাছে ঝোপ-জঙ্গল, খেলার মাঠ ও আনাচে-কানাচে এদের দেখা মিলত। সাধারণত জোড়ায় জোড়ায় বা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে বিচরণ করত ঘুঘু পাখি।

বৈজ্ঞানিক নাম-- Streptopelia chinensis । বিশ্বে কলম্বিডি নামের এই পরিবারে পাখি আছে ৩১০ প্রজাতির। আমাদের দেশে প্রজাতির সংখ্যা ১৬। তবে কেবল ঘুঘুই আছে অন্তত ৭ প্রজাতির। বাচ্চা ফুটলে প্রথম দুই-তিন দিন মা ঘুঘুর মুখ থেকে একরকম লালা নিঃসরণ হয়। এটাই ছানার খাদ্য। কবুতরের ক্ষেত্রেও তাই, একে বলে ‘পিজিয়ন মিল্ক’।ডাকের আওয়াজ থেকে নাম "ঘুঘু"।
ঘুঘুর প্রধান খাদ্য ধান ও সরিষা। এছাড়া এসব পাখি ঘাস, আগাছার বিচি, শস্যদানা, গাছের কুঁড়ি ও কচিপাতা খেয়ে থাকে। বর্তমানে ধান চাষে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করায় সেই ধান খেয়ে বিষক্রিয়ায় প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছে ঘুঘুসহ অন্যান্য পাখি। বিরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে প্রজনন ক্ষমতাও কমে যাচ্ছে ঘুঘু পাখির। এখন ঘুঘুর দেখা মিলে কদাচিত্। স্ত্রী ঘুঘু থেকে পুরুষ ঘুঘু দেখতে বেশি সুন্দর। স্ত্রী ঘুঘু পুরুষ ঘুঘুর চেয়ে ছোট। পুরুষ ঘুঘুর মাথা নীলচে-ধূসর, পিঠ ও ডানার পালক গোলাপি-মেরুন, ডানার পেছনের অংশ কালচে এবং বুক ও পেট হালকা হলদে-ধূসর। স্ত্রী পাখির রঙ পুরোপুরি আলাদা। ঘুঘু পাখি সারাবছর প্রজনন করতে পারে। সাধারণত উঁচু গাছের শাখায় ঘাস ও খড়কুটো দিয়ে বাসা বানায়। স্ত্রী পাখি প্রজননের সময় দুটি সাদা রঙের ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার ১২ দিন পর তা থেকে বাচ্চা বের হয়। বাসা বানানো থেকে বাচ্চা পালন করার কাজ স্ত্রী-পুরুষ মিলেমিশে করে। পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে, রাসায়নিক সার ও কীটনাশকযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে এবং ডিম পাড়ার হারও কমে যাচ্ছে। এছাড়া নিরাপদ আশ্রয়ের অভাব, প্রতিনিয়ত ব্যাপকহারে শিকার ও বনজঙ্গলের অভাবে প্রকৃতি থেকে প্রতিদিনই হারিয়ে যাচ্ছে ঘুঘুসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।

0 comments:

Post a Comment