30.11.09
বাবুই পাখি
বাবই আমাদের দেশের একটি অতি পরিচিত পাখি। এটি দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও পাকিস্তান ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও নেই। ৩ প্রজাতির বাবুই বেশী দেখা যায়। এরা হল_১. দেশি বাবুই (Ploceus philippinus),
২. দাগি বাবুই (Ploceus manyar)
৩. বাংলা বাবুই (Ploceus bengalensis)
এদের মধ্যে বাংলা ও দাগি বাবুই এর প্রজাতি বিলুপ্তির পথে, তবে দেশি বাবুই এখনো দেশের সব গ্রামের তাল, নারিকেল, খেজুর, রেইনট্রি গাছে দলবেঁধে বাসা বোনে। এরা সাধারণত মানুষের কাছাকাছি বসবাস করে, তাই দেখা যায় এদের বাসা মানুষের হাতের নাগালের মাত্র পাচ অথবা ছয় ফুট উপরে। ফলে অনেক অসচেতন মানুষ এদের বাসা ভেঙে ফেলে আর একারনেই এদের সংখ্যা রহস্যজনকভাবে কমে যাচ্ছে। আমাদের এখনই এদের রক্ষার্থে সচেতন হওয়া উচিত।
গত ০২-১০-২০০৯ইং তারিখে দৈনিক প্রথম আলো’য় সৌরভ মাহমুদ লিখেছেন__
বিশিষ্ট পাখি পর্যবেক্ষক ও পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক জানান, ‘বাংলা বাবুই, যার নামের শেষে বেঙ্গেলেনসিন আছে, তাই এরা বাংলারই বাবুই। তিনি জানান, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই এ পাখি দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশে মাত্র ১০০টি বাংলা বাবুই থাকতে পারে।’ তিনি অরও জানান, ‘২০০৪ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনের এক গ্রামে হোগলার বনে কিছু বাসা দেখেছিলাম, কিন্তু কয়েক দিন পর গিয়ে আর একটি বাসাও দেখতে পাইনি; মানুষ ভেঙে ফেলেছেযেহেতু এ পাখি মানুষের খুব নাগালে বাসা বোনে, তাই মানুষের সচেতনতাই পারে এ পাখির বংশ টিকিয়ে রাখতে।
বাবুইয়ের বাসা করার জন্য প্রয়োজন হয় নলখাগড়া ও হোগলার বন। কিন্তু দেশে নল ও হোগলার বন কমে যাওয়ায় এই বাবুইয়ের সংখ্যা খুবই কম। তা ছাড়া এই পাখি যেখানে বাস করে—নল ও হোগলার বনে—সেখানে মানুষের চলাচল থাকে। আর বাসা বোনে মানুষের হাতের নাগালে পাঁচ থেকে ছয় ফুট ওপরে। তাই সহজেই গ্রাম কিংবা চর এলাকার অসচেতন মানুষ এদের বাস ভেঙে ফেলে। এ কারণে অধিকাংশ বাবুই ছানা ফুটিয়ে বড় করে তুলে নিতে পারে না।আজকাল এদের বাসা গাছের ডালপালা থেকে খুলে এনে ঢাকা শহরের বিভিন্ন মার্কেটে শোপিছ হিসাবে ৭০ থেকে ১০০/১৫০ টাকায় বিক্রি করা হয়। বন্যপাখি বিশেষত অথিতি পাখি নিধন ও বিক্রি বন্ধে সরকার যেরকম আইন করেছে!!!!! জানিনা এরকম আশ্রয় ছিনিয়ে নেবার ব্যাপারে সরকারের কোন আইন আছে কিনা? থাকলেও তাযে কার্যকর নয় তা নিউমার্কেটে গেলেই বোঝা যায়।
খড়, তাল গাছের কচিপাতা, ঝাউ ও কাশবনের লতাপাতা দিয়ে উঁচু তালগাছে চমৎকার বাসা তৈরি করত বাবুই পাখিরা। সেই বাসা দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি মজবুত। প্রবল ঝড়েও বাসা ভেঙে পড়ে না। বাবুই পাখির শক্ত বুননের এ বাসা টেনেও ছেঁড়া যায় না। এরা এক বাসা থেকে আরেক বাসায় যায় পছন্দের সঙ্গী খুঁজতে। সঙ্গী পছন্দ হলে স্ত্রী বাবুইকে সাথী বানানোর জন্য কত কিছুই না করে এরা। পুরুষ বাবুই নিজের প্রতি আকর্ষণ করার জন্য খাল-বিল ও ডোবায় গোসল সেরে ফুর্তিতে নেচে নেচে বেড়ায় গাছের ডালে ডালে। এরপর উঁচু তাল, নারিকেল বা সুপারি গাছের ডালে বাসা তৈরির কাজ শুরু করে। বাসা তৈরির অর্ধেক কাজ হলে কাক্সিক্ষত স্ত্রী বাবুইকে ডেকে সেই বাসা দেখায়। বাসা পছন্দ হলেই কেবল সম্পর্ক গড়ে। স্ত্রী বাবুই পাখির বাসা পছন্দ হলে বাকিটা শেষ করতে পুরুষ বাবুইয়ের সময় লাগে চার দিন। কেননা তখন পুরুষ বাবুই মহা আনন্দে বিরামহীন কাজ করে। স্ত্রী বাবুই পাখির প্রেরণা পেয়ে পুরুষ বাবুই খুবই শিল্পসম্মত নিপুণভাবে বাসা তৈরি করে। স্ত্রী বাবুই ডিম দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুরুষ বাবুই খুঁজতে থাকে আরেক সঙ্গীকে। পুরুষ বাবুই এক মৌসুমে ছয়টি বাসা তৈরি করতে পারে।
এখন আসুন এদের সম্পর্কে একটু জানার চেষ্টা করি_
দেশি বাবুই: দেশি বাবুই যার বৈজ্ঞানিক নাম Ploceus philippinus এবং ইংরেজী নাম Baya Weaver.
এরা সাধারণত খুটে খুটে বিভিন্ন ধরনের বীজ, ধান, ভাত, পোকা, ঘাস, ছোট উদ্ভিদের পাতা, ফুলের মধু-রেণু ইত্যাদি খেয়ে জীবনধারন করে। গ্রিষ্মকাল এদের প্রজনন ঋতু। তারা সাধারণত কাটা জাতীয় বৃক্ষে বাসা তৈরী করে এবং আহার সংগ্রহে সুবিধা হয় এমন স্থান নির্বাচন করে।
দেশি বাবুই এর বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিভাগ
Kingdom: Animalia
Phylum: Chordata
Class: Aves
Order: Passeriformes
Family: Ploceidae
Genus: Ploceus
Species: P. philippinus
মাদী দেশি বাবুই
পুরুষ দেশি বাবুই
দাগি বাবুই: দাগি বাবুই যার বৈজ্ঞানিক নাম Ploceus manyar এবং ইংরেজী নাম Streaked Weaver। এরা সাধারনত উত্তাল নয় এমন জলাধারের উপরে গাছপালায় বাসা তৈরী করে বসবাস করে।দাগি বাবুই এর বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিভাগ
Kingdom: Animalia
Phylum: Chordata
Class: Aves
Order: Passeriformes
Family: Ploceidae
Genus: Ploceus
Species: P. manyar
পুরুষ দাগি বাবুই
মেয়ে দাগি বাবুই
বাংলা বাবুই: বাংলা বাবুই যার বৈজ্ঞানিক নাম Ploceus benghalensis ইংরেজী নাম Bengal Weaver অথবা Black-breasted Weaver. এরা খুব সুন্দর বাসা বানায় (বোনে) তাই 'তাঁতী পাখী" নামেও পরিচিত। এই বাসা উল্টানো কলসীর মত দেখতে। বাসা বানাবার জন্য বাবুই খুব পরিশ্রম করে। ঠোঁট দিয় ঘাসের আস্তরণ সারায়। যত্ন করে পেট দিয়ে ঘষে(পালিশ করে) গোল অবয়ব মসৃণ করে। শুরুতে দুটি নিম্নমুখী গর্ত থাকে। পরে একদিক বন্ধ করে ডিম রাখার জায়গা হয়। অন্যদিকটি লম্বা করে প্রবেশ ও প্রস্থান পথ হয়। কথিত আছে: রাতে বাসায় আলো জ্বালার জন্য বাবুই জোনাকী ধরে এনে গোঁজে।বাংলা বাবুই এর বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিভাগ
Kingdom: Animalia
Phylum: Chordata
Class: Aves
Order: Passeriformes
Family: Ploceidae
Genus: Ploceus
Species: P. benghalensis
কালো মাথার বাংলা বাবুই
পুরুষ বাংলা বাবুই
মেয়ে বাংলা বাবুই
এছাড়াও সাদা রঙের বাবুই পাখি দেখতে পাওয়া যায় যা সাদা বাবই নামে পরিচিত।এর মাথা ও বুকের পালক সাদা কিন্তু পাখার পালকের রঙ কালো, পিছনের অংশ হলদে রঙের।যার ইংরেজী নাম White-headed Buffalo-weaver ও বৈজ্ঞানিক নাম Dinemellia dinemelli।
সাদা বাবুই
লাল বাবুই লাল রঙের বাবুই পাখি যার দেহের পালক লাল আর লেজ, মাথা, পাখা কালো। ইংরেজীতে Chestnut Weaver নামে পরিচিত আর বৈজ্ঞানিক নাম Ploceus rubiginosus। এদেরকে সাধারণত Angola, Botswana, Eritrea, Ethiopia, Kenya, Namibia, Somalia, Sudan, Tanzania, and Uganda য় দেখা যায়।
তবে লাল বাবুই এর মেয়ে পাখিগুলো দেখতে অন্যরকম।
এক জোড়া লাল বাবুই
আর সোনা বাবুই যার নিবাস Kenya, Malawi, Mozambique, Somalia, South Africa, Swaziland, ও Tanzania তে।ইংরেজীতে একে Golden-weaver বা African Golden-weaver নামে ডাকে আর বৈজ্ঞানিক নাম Ploceus subaureus। এর ঠোঁট, পাখা, লেজ কালো আর মাথা বুক হলদে রঙের।
সোনা বাবই
0 comments:
Post a Comment