29.3.11

ওয়েস্টার্ন গ্রেব

ছুরির ফলার মতো ঠোঁট। দেখতে বুনো হাঁসের মতো। গভীর জল থেকে ভুস করে ভেসে ওঠা এ পাখিটির নাম ওয়েস্টার্ন গ্রেব। সাপের মতোই লম্বা গলাটি বাঁকিয়ে পানির ওপর দিয়ে হেঁটে চলে দ্রুতবেগে। বিস্ময়কর এমন দৃশ্য দেখলে যে কারও অবাক হওয়ার কথা। আর যারা পাখিটি কখনও দেখেনি বা নামও শোনেনি, তাদের কাছে মনে হবে এটা রূপকথার গল্প। কারণ পানির ওপর দিয়ে কোনো পাখি হাঁটতে পারে, এমন দৃশ্য বেশিরভাগ মানুষের কাছে একেবারেই অপরিচিত। কিন্তু ওয়েস্টার্ন গ্রেবের বেলায় এটিই সত্য। পাখিটির প্রধান বৈশিষ্ট্যই হলো, পানির ওপর দিয়ে দ্রুতগতিতে হাঁটাচলা।

ওয়েস্টার্ন গ্রেবের নিবাস উত্তর আমেরিকা ও কানাডার বিস্তৃর্ণ জলাশয়। সেখানকার নদীতীরবর্তী জলাভূমিতে এই বিস্ময়কর প্রাণীটির সন্ধান মেলে। এ প্রজাতির প্রাণী উড়তে যেমন পটু, তেমনি দক্ষ সাঁতার কাটতে। মজার ব্যাপার হলো, পানির ওপরে হাঁটার জন্য এবং দ্রুত সাঁতার দেওয়ার জন্য এদের পা অবশ্য বিশেষভাবে তৈরি। আমাদের দেশের পাতিহাঁসের পা যেমন, ঠিক তেমনি তাদের পায়ের গড়ন। সাঁতারের সময় এই পা বৈঠা হিসেবে কাজে লাগায়। আর পা প্রশস্ত হওয়ার কারণে পানির ওপর দ্রুত হাঁটার সময় ডুবে যায় না। একজোড়া লাল চুনির মতো চোখ আছে ওয়েস্টার্ন গ্রেবের। চলাফেরা করার সময় প্রাণীটি কিন্তু কখনোই একাকী থাকে না। সাধারণত জোড়া বা দল বেঁধে পানির ওপর দিয়ে হেঁটে বেড়ায়। চলাচলের ফাঁকে ফাঁকে টপাটপ মাছ ধরে। পানির নিচে এরা দীর্ঘক্ষণ ডুব দিয়েও থাকতে পারে। ওয়েস্টার্ন গ্রেব সাধারণত পানির ওপরে ঘরবাড়ি বানানো শুরু করে জুনের ঠিক শুরুতে। কারণ এটা ওদের ডিম পাড়ার মৌসুম। ভাসমান জলজ উদ্ভিদ দিয়ে বানানোর বাসায় স্ত্রী গ্রেব নীল রঙের ডিম তিন থেকে চারটি পাড়ে। মজার ব্যাপার হলো, ডিম পাড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেগুলো সাদা হয়ে যায়। বাচ্চাদের প্রতি এদের দরদ খুব বেশি। স্ত্রী-পুরুষ উভয়ে পালা করে ডিমে তা দেয়। এরপর ডিম থেকে ফুটফুটে বাচ্চা বেরিয়ে আসে। আর বড় না হওয়া পর্যন্ত বাচ্চাগুলো বাবা কিংবা মায়ের পিঠে চড়ে ঘুরে বেড়ায়। অর্থাৎ পুরুষ কিংবা স্ত্রী গ্রেব বাচ্চাদের ভাসমান বাসা হিসেবে কাজ করে আর অন্যটি ডুব দিয়ে মাছ সংগ্রহ করে বাচ্চাদের খাওয়ায়। বাচ্চারাও এক সময় শিখে যায় সাঁতার, শিকার করা আর শিখে যায় পানিতে দ্রুতগতিতে হাঁটা।

-লুৎফর রহমান

0 comments:

Post a Comment