31.3.11

ধলা চিল

একদিন প্রাক-বিকেলে শেরপুরের বাড়োমারী সীমান্ত ফাঁড়ির সড়ক দিয়ে নালিতাবাড়ী যাচ্ছি। রাস্তার দুই পাশের খেতে চলছে চাষিদের ধানকাটার উৎসব। পোকামাকড়ের খোঁজে পাকড়া শালিক কৃষকের পায়ে পায়ে হাঁটছে। ধানখেতসংলগ্ন রাস্তার কাছে বিদ্যুতের তারে ডানায় ভর দিয়ে একাকী বসে আছে একটি পাখি। পাখিটি হলো ধলাচিল বা কাটুয়া চিল (Elanus caeruleus)। কাটুয়া চিল এর নতুন নাম। কোথাও কোথাও পাখিটি কাপাশি, সাদাচিল নামেও পরিচিত। যেখানে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ থাকে, সেখানে ভুবনচিল, আর যেখানে মাছের উপস্থিতি বেশি, সেখানে শঙ্খচিল দেখা যায়। কিন্তু ধলাচিলকে দেখা যাবে গ্রামের কোনো খেতের ওপর দিয়ে চলে যাওয়া বিদ্যুতের তারে, তা ভাবিনি। এরা সাধারণত নদীর চরের ঘাসবনে কিংবা বিশাল হাওরের আকাশে উড়ে বেড়ায় ইঁদুর-ব্যাঙ কিংবা কোনো সরীসৃপ ধরার আশায়।

ধলাচিল নির্জন পরিবেশ ভালোবাসে। একাকী বসে থাকে শিকারের জন্য। পদ্মার চরে, সুনামগঞ্জের হাওরে বহুবার ধলাচিল দেখেছি। তবে পদ্মার চরে তারা সংখ্যায় ছিল অনেক বেশি।
ধলাচিলের কাঁধের পালক কালো, পিঠ ধূসর বা ছাইরঙা, লেজ ও বুকের পালক সাদা। চোখ লাল। পা হলুদ, নখর কালো। প্রজনন মৌসুমে দুজনে মিলে বাসা তৈরি করে। বাসা দেখতে কাকের বাসার মতো। তিন থেকে ছয়টি ডিম পাড়ে। ব্যাঙ, সাপ, লিজার্ড, ঘাসফড়িং, মেঠো ইঁদুর আছে তাদের খাদ্য তালিকায়।
এটি বাংলাদেশের একটি দুর্লভ প্রজাতির পাখি। গ্রামবাংলায় পাখিটি চোখে পড়ে। ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, চীন, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন ও আফ্রিকা মহাদেশে পাখিটি দেখা যায়। ঘাসভূমি, খোলা ধানখেত, ঝোপময় মরু এলাকা এদের প্রিয় আবাসস্থল। কারণ খোলা প্রান্তরে শিকার ধরা সহজ হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে সাভারের পর রাস্তার দুই পাশের বিদ্যুতের তারে ধলাচিল দেখা যায়।

0 comments:

Post a Comment