23.3.11

সাদা বুক মাছরাঙা

সাদা বুক মাছরাঙা ইংরেজিতে এদের বলা হয় White breasted Kingfisher। দেশের প্রায় প্রতিটি নদী, বিল-হাওরের পাশে এদের দেখতে পাওয়া যায়। এদের প্রধান খাদ্য হচ্ছে মাছ। এরা প্রখর দৃষ্টিশক্তির অধিকারী। নদী বা বিলের ধারে যে কোনো গাছের ডালে বা বাঁশের খুঁটিতে মাছ শিকারের আশায় বসে থাকে এরা। কোনো ছোট মাছ পানির ওপর ভেসে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎগতিতে মাছের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং ঠোঁট দিয়ে মাছটিকে ধরে আকাশে উড়ে যায়। সাধারণত এসব পাখি একা থাকতে পছন্দ করে। কিন্তু প্রজনন ঋতুতে জোড় বেঁধে চলে। ফাল্গুন থেকে বৈশাখ পর্যন্ত এদের প্রজননের পালা চলে। আমাদের দেশের শতকরা ৯৫ ভাগ পাখি যে প্রক্রিয়ায় বাসা তৈরি করে, সাদা বুক মাছরাঙা সে পদ্ধতিতে বাসা বাঁধে না। গাছের ডালে বা ঝোপের মধ্যে নয়, এরা বাসা তৈরি করে মাটিতে গর্ত করে। নদী বা পুকুরের খাড়া পাড়ে ঠোঁট দিয়ে গর্ত করে ডিম পাড়ার স্থান বা বাসা তৈরি করে এরা। বাসা তৈরিতে স্ত্রী ও পুরুষ পাখি উভয়েই অংশ নেয়। একটি পরিপূর্ণ বাসা তৈরি করতে এরা ৪-৫ দিন সময় ব্যয় করে। প্রথমে সুবিধাজনক একটি স্থান নির্বাচন করে এরা বাসা তৈরির কাজ শুরু করে। বাসা তৈরির প্রথম দিকে এরা উড়ন্ত অবস্থায় মাটিতে গর্ত করে। এভাবে একটি পাখি কিছুক্ষণ গর্ত করার পর ক্লান্ত হয়ে গেলে সে উড়ে গিয়ে কোনো গাছের ডালে বসে এবং তখন সঙ্গী পাখিটি উড়ে এসে একইভাবে গর্ত করে। এভাবে গর্ত করতে করতে এরা এক সময় গর্তের ভেতরের দিকে যায়। গর্ত একটু গভীর হলে এরা পা দিয়ে গর্তের ভেতরের মাটি বাইরে ঠেলে ফেলে ঠোঁট দিয়ে একইভাবে গর্ত করতে করতে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। এভাবে প্রায় ২০ ইঞ্চি গর্ত করার পর এরা গর্তের শেষ অংশে গোলাকার একটি স্থান তৈরি করে, এটিই তাদের মূল বাসা, এখনেই তারা ডিম পাড়ে। এদের ডিমের সংখ্যা ৫ থেকে ৭টি পর্যন্ত হয়। স্ত্রী পাখি ডিম পাড়ার পর স্ত্রী-পুরুষ উভয়ে মিলে ডিমে তা দেয়। ১৯ থেকে ২২ দিনের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বেরিয়ে আসে। বাচ্চাদের বড় করে তুলতে স্ত্রী ও পুরুষ পাখি উভয়ে ছোট ছোট মাছ ধরে এনে খাওয়ায়। এদের বাচ্চারা জন্মের ১৪ থেকে ১৮ দিনের মধ্যে উড়তে শেখে। বনবিড়াল, সাপ, গুঁইসাপ ইত্যাদি শিকারি প্রাণীরা ইচ্ছা করলেও কিন্তু সাদা বুক মাছরাঙাদের বাচ্চার ক্ষতি করতে পারে না। এর কারণ বাসা তৈরির সময় বাসার নিরাপত্তার বিষয়ে এরা দারুণ সতর্কতা অবলম্বন করে। পুকুর বা নদীর মাটির দেয়ালের এমন স্থানে এরা বাসা তৈরি করে যেখানে শিকারি প্রাণীর পক্ষে বেয়ে ওঠা অসম্ভব।


- নবাব আমিন

0 comments:

Post a Comment