15.11.10
নিকুঞ্জ
নিকুঞ্জ শব্দের অর্থ হচ্ছে বাগান অথবা লতাগৃহ। বিচিত্র এক পাখি- নাম তার বাওয়ার বার্ড। এই নামকরণের পিছে কারণ হলো তার স্বভাব। এই স্বভাবটি খুব চিত্তাকর্ষক।পুরুষ নিকুঞ্জ-পাখি তাদের ফাগুন দিনে (Reproduction period) স্ত্রী পাখিকে আকৃষ্ট করতে সুন্দর করে ঘর নির্মান করে। রঙ-বেরঙের ফুল, লতাপাতা, ডাল, কঙ্কর- প্রভৃতি কুড়িয়ে এনে বাসা বানায়।বছরের পর বছর ধরে বাসা বানায়। মানুষ যেমন বাসার সামনে সুন্দর করে বিভিন্ন কিছু সাজিয়ে রাখে, তারাও তেমন করে। ঘরের কার্পেটের মত মেঝেতে কত কিছু বিছায়। সে শুধু ঘর নয়- এক সিডাকশন পার্লার তৈরি করে। এদের এই ন্যা'চরাল ইম্পালসটা আমার কাছে নয়ন-ভুলানো নয়নাভিরাম মনে হয়েছে।
এদের পরিণয়ের মূল দড়ি স্ত্রী পাখির হাতেই। অনেকটা প্রাচীন যুগের স্বয়ম্বর বিয়ের মত। আগেকার রাজকন্যাদের বিয়ে এভাবেই হত। রাজা আশেপাশের রাজ্যের গুণীদের, রাজাদের, রাজকুমারদের নিমন্ত্রন করতেন। বিয়ের আসরে নানান পরীক্ষার আয়োজন থাকত। যে উত্তীর্ণ হত সেই রাজকুমারীকে পেত। অথবা রাজকুমারী বরমালা হাতে নিয়ে যাকে পছন্দ হয় তার গলায় মালা পরাত। ঠিক এভাবেই স্ত্রী পাখি ঘুরে বেড়ায়, বিভিন্ন পুরুষের তৈরি নিকুঞ্জ দেখে; যাকে পছন্দ হয় তার সাথে যায়। তবে এই যাওয়াটাও এত সরল নয়। স্ত্রী পাখি বলে কথা, নারীর মত সেও নোখরা দেখায়। তারপর সঁপে দিলে একেবারেই দিয়ে দেয়।
স্ত্রী পাখিকে নিকুঞ্জের কাছে দেখলে পুরুষ বিভিন্নভাবে তার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে। অনেকটা কর্পোরেট দুনিয়ার প্রেজেনটেশনের মত। এসময় সে বিভিন্ন শব্দ করে; স্ত্রী পাখিকে ঘরে আসার জন্য ডাকে। সে বিস্ময়করভাবে অনেক অনেক শব্দ অনুকরণ করতে পারে। কিন্তু স্ত্রী পাখি তখন অনেকটা কনফিউজড থাকে। যাব কি যাব না, যাব কি যাব না। পুরুষ পাখি কনফিশনটা বুঝতে পারলে এগিয়ে যায়; সে ফুলের কাছে গিয়ে ডানা নেড়ে দেখায়- 'এই দেখ ফুল তোর জন্য এনেছি। চলে আয় কলিজার আধাখান।'
স্ত্রী পাখি ভাবনায় ভাসতে ভাসতে শেষমেশ সিদ্ধান্ত নেয়। অনেকটা বাঁসর ঘরে ঢুকা কুমারীর মত ধীর-ভীতু পায়ে এগিয়ে যায়। আরেকবার সবকিছু দেখে- ফাইনাল ইনকুয়ারি। পছন্দ হয়ে গেলে- নিজেকে নিবেদিতা করে দেয়। তাদের দাম্পত্য জীবন শুরু হয় মিলনের মাধ্যমে।
0 comments:
Post a Comment