27.8.10
কবুতর
আমাদের দেশে বিভিন্ন গৃহপালিত পাখির মধ্যে কবুতর সর্বাধিক জনপ্রিয়। কারণ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কবুতর পালন করা হয়; এর সৌন্দর্যগত ও বাহ্যিক দিকগুলোর কথা বিবেচনা করে। কবুতরের মাংসে অন্যান্য পাখির মাংসের চেয়ে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি থাকে। ফলে আমিষের পাশাপাশি প্রোটিনের বাড়তি চাহিদা পূরণের জন্যও সবাই কবুতরের মাংস খায়। বাণিজ্যিকভাবে কবুতর পালন করে অনেকেই অল্প সময়ে এটাকে লাভজনক ব্যবসা হিসেবে দাঁড় করাতে পেরেছেন। কবুতর সাধারণভাবে জোড়ায় বেঁধে বাস করে। প্রতি জোড়ায় একটি পুরুষ এবং একটি স্ত্রী কবুতর থাকে। কবুতর সাধারণত ১২ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে। যতদিন বেঁচে থাকে ততদিন পর্যন্ত এরা ডিমের মাধ্যমে বাচ্চা প্রজনন করে থাকে।কবুতর পালন করলে অসুবিধার চেয়ে সুবিধাই বেশি। কবুতর পালনের সুবিধাসমূহ উল্লেখ করা হলো_ ক. সাধারণত একটি ভালো জাতের কবুতর বছরে ১২ জোড়া ডিম প্রদানে সক্ষম। এই ডিমগুলোর প্রায় প্রতিটি থেকেই বাচ্চা পাওয়া যায়। এই বাচ্চা পরবর্তী ৪ সপ্তাহের মধ্যেই খাওয়া বা বিক্রির উপযোগী হয়। খ. গৃহপালিত অন্যান্য পাখির তুলনায় কবুতরকে সহজে পোষ মানানো বা লালন করা যায়। গ. খুবই অল্প জায়গায় কবুতর লালন-পালন করা যায়। এমনকি ঝুলানো ঝুড়িতেও কবুতর পালন করা সম্ভব। লালন-পালনে কম জায়গা লাগে বিধায় কবুতর পোষায় খরচের পরিমাণ একেবারেই কম। ঘ. বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কবুতর নিজের খাবার নিজেই খুঁজে নিয়ে থাকে। এই কারণে কবুতরের খাবারের জন্য বাড়তি যত্ন বা খরচ খুব একটা হয় না বললেই চলে। ঙ. কবুতরের থাকার জায়গার জন্য বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয় না। বাড়ির আঙিনা বা ঘরের ছাদের ওপর কাঠের ঘর তৈরি করে অনায়াসেই কবুতর পালন করা যায়। ঝুড়িতে করেও কবুতর পালন করা যায়। চ. একটি পূর্ণাঙ্গ বয়সের কবুতর ডিম পাড়ার উপযোগী হতে ৫ থেকে ৬ মাস সময় লাগে। এই অল্প সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই কবুতর বছরে প্রায় ১২ জোড়া ডিম প্রদানে সক্ষম। ২৬ থেকে ২৮ দিন বয়সেই কবুতরের বাচ্চা খাবার উপযোগী হয়ে থাকে এবং এই বাচ্চা বাজারজাত করা যায়। সাধারণত কবুতরের বাচ্চা রোগীর পথ্য হিসেবেও অনেকে বেছে নেন। ছ. কবুতরের ডিম থেকে মাত্র ১৮ দিনেই বাচ্চা সাধারণ নিয়মে ফুটে থাকে। এই বাচ্চা আবার পরবর্তী ৫ থেকে ৬ মাস পরে নিজেরাই ডিম প্রদান শুরু করে। ফলে কবুতর বংশপরম্পরায় প্রাকৃতিক নিয়মে নিজেরাই বাড়াতে থাকে নিজেদের সংখ্যা। জ. কবুতরের মাংসের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। কারণ, কবুতরের মাংস খুবই সুস্বাদু ও বলকারক। তাছাড়া কবুতর কিছুটা সস্তায়ও পাওয়া যায়। একটি ভালো প্রজাতির কবুতর লালন করলে পরবর্তী ১ বছরের মধ্যে সেই জোড়া থেকে কয়েক জোড়া কবুতর পাওয়া খুব বেশি আর্শ্চযজনক বিষয় নয়। এই কবুতরকে একটি লাভজনক ব্যবসা হিসেবে ধরা যেতে পারে। কারণ, কবুতর লালন-পালনের খরচ খুব একটা নেই। এমনকি কবুতরের রোগব্যাধি কম হয়। কবুতরের থাকার জায়গা নির্বাচনেও অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন হয় না। এ কারণে ব্যবসায়ি কভিত্তিতে কবুতর পালন অবশ্যই লাভজনক। ধারাবাহিকভাবে কবুতর তার বংশ বৃদ্ধি করে বলে অনেকেই আজকাল কবুতর পালনের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। মুরগির কিংবা অতিথি পাখির মাংসের বিকল্প হিসেবে অনেকেই কবুতরের মাংস বেছে নিয়ে থাকেন।
কুকুরের সঙ্গে মানুষের বন্ধুত্ব শুরুর পরপরই মানুষের সঙ্গে পায়রার সখ্য। এটা প্রায় ১০ হাজার বছর আগের কথা হবে। মেসোপটেমিয়া সভ্যতায় পায়রাকে উর্বরতার দেবী হিসেবে পূজা করা হতো। প্রাচীন মিসরীয়রা নীলনদবিধৌত অঞ্চলে খবর আনা-নেওয়ার জন্য একে ব্যবহার করত। ৭৭৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে অনুষ্ঠিত প্রথম অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার খবরও প্রচার করা হয় এ পাখির মাধ্যমে। এর আড়াই শ বছর পরই ওয়াটারলুতে নেপোলিয়নের পরাজয়ের খবর লন্ডনে পাঠানো হয় পায়রার মাধ্যমেই। বাদশাহ সোলোমন শুধু পায়রার গুণগান করেই ক্ষান্ত হননি। তিনি বহু জরুরি রাজনৈতিক বার্তাও এ পাখির মারফত আনা-নেওয়া করতেন। একই কাজ করতেন জুলিয়াস সিজার, হানিবল, চেঙ্গিস খানের মতো দুনিয়া কাঁপানো রাজরাজড়ারা।
১৮ শতকের মাঝামাঝিতে টেলিগ্রাফ আসার আগ পর্যন্ত বার্তা পাঠানোর সবচেয়ে দ্রুত ও নিরাপদ মাধ্যম ছিল পায়রা। এমনকি চার্লস ডারউইন তাঁর বিবর্তনবাদ তত্ত্বও দাঁড় করিয়েছেন পায়রার ওপর ব্যাপক গবেষণার মধ্য দিয়েই। তাঁর ওরিজিন অব দ্য স্পিচ বইয়ে এর নিদর্শন মেলে।
পাখিটির এই বর্ণিল ঐতিহ্যময় অতীতের পাশাপাশি এর অসম্ভব ওড়ার ক্ষমতারও গুণগান করতে হয় বৈকি। পায়রা কোনো বিরতি ছাড়াই ৬০০ মাইল পর্যন্ত উড়তে পারে। ঘণ্টায় পাড়ি দিতে পারে গড়ে প্রায় ১০০ কিলোমিটার। অথচ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সবচেয়ে দ্রুতগামী রেসের ঘোড়াটিও ঘণ্টায় ৫৫ কিলোমিটারের বেশি যেতে পারে না।
বার্তাবাহক কিংবা দৌড়বিদ হিসেবে পায়রা তো সুপরিচিত। কিন্তু এরা সৃষ্টিশীলও। নিখুঁত বাসা তৈরিতে এরা যে দীর্ঘ সময় কঠোর শ্রম দেয়, তা যেকোনো শিল্পীর ধৈর্যের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। নিখুঁত একটি বাসা বানাতে এরা ১০ বছরের মতো সময় নেয়।
নানা প্রজতির পায়রা দেখা যায়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গিরিবাজ কবুতর, গলা কবুতর, জালালী কবুতর, ব্রুনাল পোটার, ম্যাগপাই পোটার, ফিলব্যাক, লক্কা, ওরিয়েন্ট ফিল, নিকোবর(ইন্দোনেশিয়ার নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে এই কবুতরের আদি নিবাস), কালো কিং, স্ট্রেচার-হলুদ চেকার(এটা দেখতে প্রাপ্তবয়স্ক ব্রয়লার মুরগির মতো)।
-ইসরাত জাহান
2 comments:
বেশ সুন্দর হয়েছে।
September 14, 2010 at 7:51 PMnice duds
March 4, 2012 at 9:43 AMPost a Comment