29.8.12
জল মোরগ
জলমোরগের ইংরেজি নাম Water Cock। এর বৈজ্ঞানিক নাম Gallicrex cinerea। পুরুষটির মাপ ৪৩ সেন্টিমিটার। মেয়েটির ৩৬ সেন্টিমিটার।
শরীরের পালকের রং বাদামি। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখিটির রং হয়ে যায় চমৎকার কালো, কপালে মুকুটের মতো থাকে আলতা রঙের বর্ম, পা থাকে লালচে-ধূসর, ঠোঁট টকটকে হলুদ। এ সময় এরা দাপটের সঙ্গে হাঁটে—দাপটের সঙ্গে ডাকে। হয়ে পড়ে দারুণ লড়াকু।
ধানগাছ বা ঘাস দিয়ে ধানখেত বা বিল-হাওরের ঘাসবনে বেশ বড়সড় বাসা করে। ডিম ছয় থেকে আটটি। ফোটে ১৬ দিনে। আজ থেকে ৫০ বছর আগেও গ্রামবাংলার আমনের মাঠ ভাদ্র-আশ্বিনে মুখরিত থাকত জলমোরগের ডাকে। দিন বদলে গেল দ্রুত। সেই আমনের মাঠ নেই, নেই নিরাপদ-নিরুপদ্রব বিল-হাওর। আজ আর ডিম পেড়ে বা ছানা তুলে শান্তি নেই। এককালে বহু গ্রামেই পোষা কোড়া ছিল। এখন কিশোরগঞ্জসহ দেশের দু-একটা অঞ্চলে দু-চারটি পোষা কোড়া দেখা যায়।
কোড়াদের মূল খাদ্য বিভিন্ন বীজ, পোকা-পতঙ্গ, কচি ঘাসের ডগা, ছোট মাছ ইত্যাদি। পোষা কোড়ার সামনে আয়না ধরলে প্রতিপক্ষ ভেবে দারুণভাবে খেপে যায়—সে এক দেখার মতো দৃশ্য বটে! এদের ছোট বাচ্চাদের দেখতেও লাগে খুব সুন্দর। দুটো বুনো পুরুষ কোড়ার লড়াইও দারুণ উপভোগ্য দৃশ্য। লড়াইরত দুটি পাখিকেই ধরে ফেলা সম্ভব। সুন্দর ও সাহসী-লড়াকু এই পাখিটি টিকে থাকুক আমাদের প্রকৃতিতে—এ রকম কামনাই হওয়া উচিত সবার। শীতে ফকিরহাট ও বাগেরহাটে আজও বেশ কিছু কোড়া বিক্রি করে পেশাদার পাখি শিকারিরা। দেশের অন্য হাওরাঞ্চলেও ধরা-মারা পড়ে। এই প্রবণতা রুখে দেওয়া অতীব জরুরি।
শরীফ খান | প্রথম আলো
0 comments:
Post a Comment