21.3.12

ভ্যাদা টুনি

চরিত্রে অতি নিরীহ। চালচলনে একটা ধীরস্থির ভাব। মায়াবী চোখে করুণ চাহনি। স্বভাবে নম্রভদ্র। সব মিলিয়ে একটা বোকাসোকা ধরনের পাখি। নাম তাই ‘ভ্যাদাটুনি’। এটি বাগেরহাটের স্থানীয় নাম। এ নাম প্রাণিবিদ মনিরুল খান তাঁর লেখা একটি বইয়ে উল্লেখ করেছেন।

চার রকম সুরে গান গাইতে পারে এরা। বাজাতে পারে চমৎকার লম্বা লয়ের শিস। কী রকম মিষ্টি সুরেলা যে গলাটা! কী দারুণ, করুণ! খুব ভোরে এক জায়গায় বসে ডাকবে একটানা অনেকক্ষণ। ভোরের ডাকটা হয় ‘টুইটি-ট-টু-টিট টিট’। গলায় আছে দারুণ কারুকাজ।
ভোরের গান সমাপ্ত করে জোড়া ধরে বেরোবে খাবারের সন্ধানে। অপেক্ষাকৃত নিচু ঝোপঝাড়, নারকেল-সুপারির পাতায় জোড়ায় জোড়ায় ঘুরে অ্যাবোক্র্যাটদের মতো পোকা-পতঙ্গের সন্ধান করবে। খুব কাছে গেলেও ভয় পায় না, ওড়ে না সহজে। এ জন্য ক্বচিৎ এরা পোষা বিড়াল, বেজি ও বনবিড়ালের কবলে পড়ে। সোনাব্যাঙগুলোও লাফ দিয়ে ধরে ফেলে। পানের বরজ এদের অতিপ্রিয় চারণক্ষেত্র। অন্য কোনো পাখির সঙ্গে এরা কখনো ঝগড়া-ফ্যাসাদ করে না।
গ্রীষ্মকালে বাসা করে নিচু ঝোপঝাড়ের ভেতরে। ডিম প্রায় সময়ই পাড়ে চারটি। ক্বচিৎ পাঁচটি। বাসা বাঁধার গান আছে এদের—আছে ডিম পাড়ার গান। আহা, কী করুণ সুরেলা গান! এরা অনেক সময় এমন সব আশ্চর্য-অবিশ্বাস্য জায়গায় বাসা করে, দেখলে অবাক হতেই হয়।
ভ্যাদাটুনির ইংরেজি নাম Abbott’s Babler। বৈজ্ঞানিক নাম Malacocincla abbotti। মাপ ১৭ সেন্টিমিটার। সারা দেশেই দেখা মেলে এদের।

শরীফ খান |  ছবি: শিহাব উদ্দিন

0 comments:

Post a Comment