15.8.11

হট্টিটি

অত্যন্ত চালাক আর আদুরে এক পাখির নাম হট্টিটি। পাখিটির ইংরেজি নাম 'রেড ওয়াটলেড ল্যাপউইং' এবং বৈজ্ঞানিক নাম 'ভার্নলাস ইন্ডিকাস'। এটি 'চ্যারারাইডাই' গোত্রের পাখি। হট্টিটির শরীর সাধারণত ৩৪-৩৭ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর মধ্যে ঠোঁট ৪ সেন্টিমিটারের আর লেজ ও ডানা ২৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। আকারে অনেকটা দেশি মুরগির মতো হয় এ হট্টিটি।

আমাদের দেশে সাধারণত দুই রকমের হট্টিটির দেখা মেলে। এর মধ্যে লাল লতিকা হট্টিটিই অধিক পরিচিত ও সমাদৃত। মজার ব্যাপার হচ্ছে, দেখতে তুলতুলে আদুরে এ পাখিটি নিজেদের প্রয়োজনে পাঁচভাবে ডাকাডাকি করতে পারে। এরা সঙ্গীকে খুশি করতে একরকম, বাসা বাঁধা ও ডিম দেয়ার সময় একরকম, আনন্দে একরকম, বাচ্চাদের দিকনির্দেশনা দিতে একরকম এবং সম্ভাব্য বিপদ এড়াতে ভিন্নরকম শব্দে ডাকতে পারে_ যা অন্য কোনো পাখির ক্ষেত্রে একেবারেই বিরল।
এ পাখিটি বাসা বাঁধে খোলা মাঠ, চষা ক্ষেত, ছোট ঘাস বা নানারকম ছোট উদ্ভিদ গুল্মের ওপর। বাসা তৈরিতে এরা খুব বেশি সময় নেয় না। তাছাড়া খুব বেশি গোছালোও নয় ওদের বাসা। বড় জোড় এক সপ্তাহ সময় নেয় বাসা তৈরিতে। ছোট মাটির ঢিল, শামুকের খোল, ইটের টুকরা, পুরনো দালানের পলেস্তারার টুকরো, শুকনো সুপারি, মাটির হাঁড়ি-কলসির চাড়া ইত্যাদি তাদের বাসা তৈরির উপকরণ।
হট্টিটির পিঠের রঙ বাদামি, পেট সাদা, আর মাথা, বুক ও গলা কালো। দুই চোখের সামনে একটি করে লাল মাংসল অাঁচিলের মতো আছে। চোখের পাশ থেকে একটা চওড়া সাদা দাগ গলার পাশ বরাবর নেমে পিঠের সাদা অংশের সঙ্গে মিশেছে। চষ্ণু কমলা-লাল, ডগা কালো, পা ও আঙুল সবুজে লাল। হট্টিটির খাদ্য তালিকাও বেশ বড়। শস্য বীজ, কচি ঘাস, পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ, কেঁচো, সাপের ছোট বাচ্চা, ফুলের মধু সব কিছুই খায় ওরা।
হট্টিটি নিয়ে প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্যে একাধিক গল্প ছড়িয়ে আছে, যা থেকে নানা উপকথা বা মিথের জন্ম হয়েছে। হট্টিটির লম্বা পা নিয়ে একটি জনপ্রিয় মিথ এ রকম_ 'সৃষ্টির শুরুতে হট্টিটি পাখির গর্ব ছিল যে সে স্বর্গ, আকাশ আর পৃথিবীর ভার বহন করতে পারে। আর তা অন্য পাখিদের কাছে বলে বেড়াত সর্বদা। এতে পাখিরা বিরক্ত হয়ে একদিন সবাই মিলে বিধাতার কাছে নালিশ করল। নালিশ শুনে বিধাতা হট্টিটিদের অভিশাপ দিলেন, হট্টিটিকে পায়ের ওপর আকাশের ভার বহন করতে হবে। এ জন্যই নাকি হট্টিটির দেহের তুলনায় পা বেশি লম্বা। আর মাথার ওপর আকাশ ভেঙে পড়ার ভয়ে হট্টিটি পা দুটি আকাশপানে তুলে শয়ন করে। তবে বাস্তবে কখনো হট্টিটিদের আকাশের দিকে পা উঁচু করে থাকতে দেখা যায়নি। তবে আঙুলের গঠন বৈশিষ্ট্যের কারণে এরা গাছের ডালে বসতে পারে না। মাটির ওপরই চলাফেরা, আহার, বিশ্রাম, বংশবৃদ্ধি সবকিছুই করে থাকে।
Red wattled Lapwing by Rezowan

0 comments:

Post a Comment