25.10.10

পেঙ্গুইন

ডিসকভারি বা ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেলের দৌলতে আমরা সবাই পেঙ্গুইন পাখি দেখেছি। ঠাণ্ডা জলবায়ুর দেশে বিশেষত বরফঢাকা মেরু প্রদেশে সাধারণত এদের বসবাস। পুঁচকে সাইজের এই পেঙ্গুইন পাখিগুলোর হাবভাব বেশ মজার। টিভি চ্যানেলগুলোতেই দেখি কিরকম যেন গম্ভীর মেজাজে সারাক্ষণ দুরন্তপনা করছে এই পাখির দল। সবচেয়ে অদ্ভুত এদের দু'পায়ে খাড়া হয়ে চলাফেরা করার ধরন। কখনও দিগন্তবিস্তৃত সাদা বরফ মোড়া রাজ্যে হৈচৈ করে বেড়াচ্ছে, আবার কখনও বা ঝাঁপিয়ে পড়ছে কনকনে ঠাণ্ডা নীল সমুদ্রের জলে। সমুদ্রের হিমশীতল ঠাণ্ডা জলে নরম গা ভিজিয়ে আমেজ নিচ্ছে পেঙ্গুইনের দল। এদের আরো একটা বিশেষত্ব রয়েছে সেটা হলো_ এরা সব সময় ঝাঁক বেঁধে বসবাস করতে ভালোবাসে। সাধারণত দেখবে একই জায়গায় কাতারে কাতারে পেঙ্গুইনের দল ছুটোছুটি করে বেড়াচ্ছে। মূলত শীতপ্রধান দেশের এই পাখি সম্পর্কে এতক্ষণ যা বললাম তার প্রায় বেশিরভাগই তোমাদের জানা। আসলে বিজ্ঞানীরা অতি সম্প্রতি এই পক্ষীকুলের এক প্রতিনিধির জীবাশ্ম আবিষ্কার করেছেন। আর সেই ঘটনার পরেই ছোটখাটো এই প্রাণীটি সম্পর্কে অনেক নতুন তথ্য প্রকাশ হয়ে পড়েছে। আর সেসব কথা বলতেই আজ আমি তোমাদের জন্য খাতা-কলম নিয়ে বসেছি। সবাই না হলেও তোমাদের অনেকেই পেরু নামের একটি দেশের কথা ভূগোলের বইতে বা মানচিত্রে পড়ে বা দেখে থাকবে। এই দেশটির রাজধানীর নাম লিমা। তা প্রাচীন এই পেরুর উপকূলবর্তী অঞ্চলে কিছুদিন আগেই সেখানকার মাটি খোঁড়াখুঁড়ির কাজ করছিলেন একদল জীবাশ্ম বিজ্ঞানী। তাদের উদ্দেশ্য মাটির তলা থেকে উদ্ভিদ বা প্রাণী জীবাশ্মের অনুসন্ধান কাজ চালানো। জীবাশ্ম বিজ্ঞানীদের এই অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন লিমা শহরে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব সান মারকোজ মিউজিয়াম অব নেচারাল হিস্ট্রির জীবাশ্ম বিজ্ঞানী অধ্যাপক রোডোলফো সালাস গিসমোন্ডি। এছাড়া দলটিতে ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস-এর অঙ্গব্যবচ্ছেদ বিশারদ জুলিয়া ক্লার্কে। মাটির তলায় এরা খুঁজে পান বহু প্রাচীন যুগের একটি জীবাশ্ম। জীবাশ্মটি থেকে ধূলিকণা সরিয়ে যখন এটিকে মোটামুটিভাবে সাফসুতরো করা হলো প্রথমটাতে কেউই বুঝতে পারেনি জীবাশ্মটি আসলে কার। বিজ্ঞানীরা ভাবছিলেন হয়তো অচেনা অনামি কোনো প্রাণীর জীবাশ্ম এটি। কিন্তু জীবাশ্মটিকে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ এবং মাপজোখ করার পর জীবাশ্ম বিজ্ঞানীরা নিজেরাই হতবাক। আরে এ যে নিপাট নিরীহ পেঙ্গুইনের জীবাশ্ম। জীবাশ্মটির নিয়ে বিজ্ঞানীদের প্রাথমিক দ্বন্দ্বের কারণ শুনলে তোমরাও অবাক হবে। খুঁজে পাওয়া জীবাশ্মটি লম্বায় দেড় মিটার অর্থাৎ ৫ ফুট এবং এটি পরীক্ষার পর বিজ্ঞানীরা বলেছেন, মূল প্রাণীটির ওজন ছিল ৬০ কেজি। অর্থাৎ প্রায় একটা মানুষের কাছাকাছি সমান উচ্চতা ও ওজন। এবার একবার ভাবো তো টিভিতে বা ছবির বইতে আমরা যে পেঙ্গুইন দেখি তার সঙ্গে পূর্বপুরুষ এই জীবাশ্মটির কী বিস্ময়কর ফারাক। অর্থাৎ এই এটি আবিষ্কারের পর জানা গেল এখন আকারে অনেক ছোট হয়ে গেলেও প্রাগৈতিহাসিক যুগে পেঙ্গুইনের দল মোটেও দুবলা-পাতলা ছিল না। আরো একটা চমকপ্রদ তথ্য জানা গেছে। এখনকার দিনের মতো মোটেই সাদাকালো ছিল না অতীতের বৃহদাকৃতির পেইঙ্গুনের দল। বরং বেশ রঙিনই ছিল তারা। এদের পালকের রং ছিল লালচে খয়েরি। যুগ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাওয়াতে দেহের আকার ও রং সবই বদলাতে হয়েছে সামুদ্রিক এই পাখির দলকে।

শামীম শিকদার

0 comments:

Post a Comment