4.12.09

হাঁস


হাঁস হচ্ছে অ্যানাটেডে (Anatidae) পরিবারের অন্তর্ভুক্ত পাখিদের বেশ কিছু প্রজাতির সাধারণ নাম। হাঁসদেরকে বেশ কিছু উপপরিবারের ভাগ করা হয়েছে। এরা একই ধরণের অন্যান্য পাখি যেমন রাজহাঁসের চাইতে আকারে অনেক ছোট হয়ে থাকে। হাঁস অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জলজ পাখি। স্বাদু ও লবনাক্ত - উভয় ধরণের পানিতেই হাঁসদের দেখা যায়।কিন্তু জলাশয় ছাড়াও হাঁস পালন সম্ভব। এবং সেটা হবে ঠিক মুরগির মত ঘরের মধ্যে রেখে। মেঝেতে বিছানা পেতে। তবে খেয়াল রাখতে হবে সে হাঁস- শুধু বাওয়া বা অনিষিক্ত ডিমই পেড়ে যাবে। তাতে কোনদিন বাচ্চা হবে না। নিষিক্ত ডিম চাইতে গেলে পানির সঙ্গে মদ্দা হাঁস ও লাগবে। এই কারণে অনায়াসে হাঁসকে পানি ছাড়াও পালন করা সম্ভব। কারণ, কেবল প্রজনন ছাড়া হাঁসের পানির দরকার পড়ে না। পৃথিবীর সব হাঁস এসেছে বনো-পাখি থেকে। এই বুনো পাখি আমাদের দেশের মাটিতে একদিন চরে বেড়াত। সে হাঁস এশিয়ার অন্য বুনো-হাঁসের মত এখানকার পানিতে, জঙ্গলে চরে বেড়াতো। এই বুনো হাঁস ''ম্যালারড্" গোষ্ঠীর।

খুবই দুঃখের কথা, বাংলাদেশ গর্ব করতে পারে এমন কোন তবে নিজস্ব হাঁস নেই। অথচ মজার কথা সব উন্নত জাতের মূল সূত্র ম্যালারড্ এককালে আমাদের দেশেরই পানিতে, জঙ্গলে চরে বেড়াতো।


খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস আজ থেকে প্রায় দেড়শ বছর আগে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে- দুইটি হাঁসের মিলনের মধ্যে দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এই দুটো হাঁসের রয়েছে দুটো ভিন্ন ভিন্ন গুণ। তাদের একটি মাংস এবং অপরটি ডিমের জন্য বিখ্যাত। তারা হলো ইন্ডিয়ান রানার এবং রুয়েল ক্যায়ুগা। খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁসটি সষ্টি করেন তৎকালীন ভারতীয় ব্রিটিশ রাজ্যপাল পত্নী মিসেস ক্যাম্পবেল। হাঁসটির রং খাকি বা ছাই ছাই বাদামি।

তৎকালীন পাকিস্তানী ( বর্তমান বাংলাদেশ) শাসক সেই হাঁসের চাষ নিজ দেশে করার জন্য জনগণকে উদ্ধুদ্ধ করার চেষ্টা করে। জনগন ও কম জায়গায় বা অল্প জায়গায় এমন লাভজনক ফলাফল দেখে বেশ উৎসাহী হয়ে পড়ে। তারপর থেকে প্রথমে পাকিস্তান- পরে স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশে খাঁকি ক্যাম্পবেল জাতের হাঁস পালনের প্রতি বিশেষ জোর দেয়া হয়। এই ভাবে প্রায় প্রতিটি গ্রামীণ মানুষের কাছে পৌছে গেছে এই জাতের হাঁস পালনের সুফল বার্তা।

সবচেয়ে বড়ো কথা, খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস আমাদের দেশের আবহাওয়ায় টিকে ও গেছে ভাল। গড়ে ডিম দেয় বছরে তিনশো মতো।দশটি মাদির পেছনে একটি মদ্দা যথেষ্ট।উন্নত জাতের হাঁস সাড়ে চার মাসে এবং দেশী হাঁস ছয় মাস বয়সে ডিম দেয়। হাঁসের ডিম আকারে বেশ বড়।প্রতিটি ডিমের ওজন ৫০ থেকে ৬০ গ্রাম। 

হাঁসের তেলতেলে পালকগুলি ওর দেহে চাটুর মত সাজানো থাকার জন্য চট করে গায়ে পানি লাগে না। দেহে পানি না বসার আরো একটা কারণ হলো হাঁসের চামড়ার নিচে আছে চর্বির একটা পর্দা। এই কারণে হাঁস ঘন্টার পর ঘন্টা পানিতে থাকলেও ওদের দেহের নাম মাত্র ক্ষতি হয় না। হাঁসের আরেক বিশেষত্ব ওর পায়ে। পায়ের তিনটি আঙ্গুল একটা পাতলা চামড়ায় মোড়া। যা নৌকার বৈঠার মত কাজ করে আঙ্গুল শেষ নখে। কোন কোন জতের হাঁসের নখ আত্মরক্ষার কাজ করে।হাঁসের ঠোঁটটা ও লক্ষ্য করার মত। লাল থেকে কমলালেবুর রঙা। শক্তপোক্ত। ঐ শক্ত শক্ত ঠোঁটটার নিচে রয়েছে ঝিলি্ল। ঐ নরম শৈ্লষ্মিক ঝিলি্ল আটকে দেয় ওপরের শক্ত ঠোঁটের আবরণীর সাহায্য পানির মাঝের নানা ধরনের খাবার - শেওলা, কীটপতঙ্গ, মাছের ডিম থেকে ডিম পোনা, ধানীপোনা এমন কি ফুলধনী পর্যন্ত। অর্থাৎযা আটকাবে সব চলে যাবে সটান পাকস্থলীর মধ্যে। হাঁসের ঠোঁট আত্নরক্ষার কাজে ও সাহায্য করে।
হাঁস ডিম পাড়ে সমস্ত রাত ধরে এবং সকাল ৯টা পর্যন্ত। 

Domesticated ducks
হাঁস খায় প্রচুর এরা চালের কুড়ো, যে- কোন খোল (রেডি মহুয়া বাদ দিয়ে), আটার ভূষি, মাছ-মাংসের ফেলনা বা ফেলে দেওয়া জিনিস এবং প্রচুর পরিমানে গেঁড়ি, শামুক খায়। এরা বিভিন্ন জাতের হয়ে থাকে।

ডিমের জন্য খাকি কেমবেল, ইন্ডিয়ান রানার, জিন্ডিন আর মাংসের জন্য পিকিং,আয়লেশবারি, মাসকোভি, রুয়েল ক্যায়ুগা, সুইডেন হাঁসগুলি বিখ্যাত ।মদ্দা হাঁসগুলির  ওজন ৫কেজি আর মাদি  ৪কেজি মতন।হাঁসের মাংসে আঁশটে গন্ধ। ছোবড়া ছোবড়া খেতে। মুখে পালকের থেকে যাওয়া গোড়া লাগে। মাংসে পালকের জন্য ফুটোয় ভর্তি। মাংসের রং কালো।এছাড়াও আছে পিয়ং হাঁস, কুন্তি হাঁস, উত্তুরে খুন্তি হাঁস, জিরিয়া হাঁস, পাতারি হাঁস, ভুটি হাঁস, মরচেরং ভুতি হাঁস, বড় ভুতিহাঁস, কালো হাঁস, বালি হাঁস, রাজ হাঁস, পাতি হাঁ‍স, ইউরেশীয় সিঁথি হাঁস, টিকি হাঁস, পাতারি হাঁস, গেছোহাঁস, বড় সরালী বা ফুলভাস, বামুনিয়া হাঁস, পাতারি হাঁস, পান্তামুখী বা খুন্তেহাঁস, চীনা হাঁস ইত্যাদি।

গৃহপালিত হাঁস
নিচু, উচু, স্যাতসেতে বা জলো এবং শুকনো খটখটে- প্রায় সবরকম জায়গায় হাঁস পালন চলবে। বরঞ্চ জলো বা সঁযাতসেতে জায়গা ওরা পছন্দ ও করে। বড় বড় ফলের ঝুড়ি, কাঠের বাক্র, তেলের ড্রাম বা পালনকারীর সুবিধামতো কোন একটা জায়গা হাঁসকে দিলেই চলবে।আশ্রয় তবে যাই হোক না কেন- মুখটা যেন ভালো করে খোলা থাকে।কারণ হাঁসের স্বভাব হলো ঘরে মাথা উঁচু করে ঢোকা। আর একটা জিনিসের দিকে খেয়াল রাখতে হয় সেটা হলো- ঘরের বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রন। হাঁসের ঘরে আলো- আঁধারির খেলা অহেতুক সৃষ্টি করা যাবে না। সম্পূর্ণ অন্ধকার রাখতে হবে ওদের। আর এতেই হাঁসের শরীর এবং মন ভালো থাকবে।

1 comments:

Duck Video said...

কিছু অতিথি হাসের নাম হলো:-
বালি হাঁস, লেঞ্জা হাঁস, পাতারি হাঁস, বৈকাল হাঁস, গিরিয়া হাঁস, ধূসর রাজহাঁস, ভূতি হাঁস, চিতি হাঁস, বারো ভূতি হাঁস, বৌমুনিয়া হাঁস

April 11, 2012 at 9:06 AM

Post a Comment