30.6.16

গাঙটিটি

এক দশক আগেও নদ-নদীর ওপর দিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যেতে দেখা যেত নদীটিটি পাখিকে। সম্প্রতি মহানন্দা, ডাহুক ও করতোয়া নদীর পাড়ে বিরল এই পাখির দেখা মিলছে। জোসনা রাতে এ পাখি হাটিটি-হাটিটি বলে ডাকে। পাখিটিকে স্থানীয়ভাবে গাঙটিটি (Yellow-wattled Lapwing) নামেই চেনে সবাই। বৈজ্ঞানিক নাম Vanellus malabaricus

নদী টিটি পায়রা আকারের পাখি। লম্বায় ২৯-৩২ সেন্টিমিটার। ওজন ১৬০-১৬৫  গ্রাম। পিঠের রং বেলে-বাদামি। মাথার খোঁপা, মাথা, ঘাড়, মুখমন্ডল ঠোঁট ও বুকের ওপরের অংশ কালো। বুক ধূসর-বাদামি। পেট সাদা ও পেটের মাঝখানটা কালো। লেজের শেষ প্রান্ত, পা, আঙুল ও নখ কালো। 

স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম হলেও আকারে পুরুষগুলো খানিকটা বড় হয়। বাচ্চাদের মাথায় সাদা ফোঁটা এবং পিঠে হলুদ ও গাঢ় দাগ থাকে।। মার্চ থেকে জুন এদের প্রজনন মৌসুম। 
গাঙটিটি নুড়িপাথর, বালু দিয়ে বাসা বেঁধে ডিম পাড়ে। পঞ্চগড়ের নদীগুলোতে হিমালয় থেকে বালুর সঙ্গে ভেসে আসে নুড়িপাথর। নদীটিটি পাখির ডিম জলপাই রঙের হয়। শত্রুর হাত থেকে ডিম বাঁচাতে নুড়িপাথর আর জলপাই রঙের ডিম মিলেমিশে একধরনের ছদ্ম পরিবেশ তৈরি করে এ পাখি। এ ছাড়া বাসার ধারে-কাছে মানুষ বা অন্য কোনো প্রাণীর উপস্থিতি টের পেলেই শত্রুকে বিভ্রান্ত করতে নিজের বাসা ছেড়ে অন্য জায়গায় গিয়ে জোরে ডাকাডাকি করতে থাকে। 

স্ত্রী গাঙটিটি তিন-চারটি জলপাই রঙের ডিম পাড়ে। ২২-২৪ দিনে বাচ্চা ফোটে। পা ও ঠোঁট ছাড়া সদ্য ফোটা বাচ্চাগুলো দেখতে একদম ডিমের রঙের মতোই মনে হয়। ডিম থেকে বের হয়ে ২৪-৩৬ ঘণ্টার মধ্যেই বাচ্চারা মা-বাবার সঙ্গে বাসা ছেড়ে হাঁটা দেয়।

গাঙটিটি বালুর মধ্যে মুখ ডুবিয়ে দারুণ ভঙ্গিতে খাবার খোঁজে। সাধারণত কীটপতঙ্গ, ছোট ব্যাঙ, কাঁকড়া জাতীয় প্রাণীই এদের খাবার। এ পাখির বাচ্চা বিপদ টের পেলেই মুহূর্তে মাটির সঙ্গে নিজেদের গায়ের রং মিলিয়ে একাকার হয়ে যায়।

0 comments:

Post a Comment