11.4.12
সাদা-কোমর মুনিয়া
গায়ক পাখি ‘সাদা-কোমর মুনিয়া’ (White-rumped Munia)। বৈজ্ঞানিক নাম Lonchura striata। অন্যান্য মুনিয়ার মতো শহর-বন্দর-গ্রামে দেখা যায় না। কারণ, এদের আবাস পাহাড়ি এলাকায়। সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের চিরসবুজ বন ছাড়া দেখা মেলা ভার। এরা লম্বায় মাত্র ১০ সেন্টিমিটার, তিলা মুনিয়ার থেকেও ১ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার ছোট। ওজন মাত্র ১২ গ্রাম। গায়ের রঙে গাঢ় কালচে বাদামি ও সাদার প্রাধান্য। হঠাৎ দেখলে সাদা-কালোই মনে হবে। পূর্ণবয়স্ক পাহাড়ি মুনিয়াগুলোর পুরো দেহ গাঢ় কালচে বাদামি। পিঠ, লেজের ওপরের পালক ও ডানার পালকে সূক্ষ্ম হালকা দাগ রয়েছে। কোমর সাদা। ছোট ও চোখা লেজ কালো। গলা ও বুক কালচে-বাদামি, বুকে সূক্ষ্ম হালকা দাগ। পেট ক্রিম সাদা। ওপরের ঠোঁট কালো ও নিচেরটা নীলচে ধূসর। চোখ লালচে বাদামি। পা গাঢ় ধূসর। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। বাচ্চাগুলোর কোমর ও দেহের নিচের অংশ হালকা ছোপযুক্ত বাদামি।এরা মাধ্যমিক জঙ্গল, বনের সাফ করা অংশ, বাগান ও ঝোপে বাস করে। সাদা-কোমর মুনিয়া দলবদ্ধ পাখি, একসঙ্গে ১৫-২০টি পর্যন্ত থাকতে পারে। মাটিতে খুঁটে খুঁটে বাঁশ ও ঘাসবিচি খায়। ‘ট্রি-ট্রি-ট্রি-প্রিট ও ব্রিট’ স্বরে ডাকে।
মে-আগস্ট প্রজননকাল। ছোট ছোট গাছের উঁচু শাখায় বড় আকারের ঘাস বা বাঁশপাতা দিয়ে ছোট্ট গোল বাসা বানায়। বাসায় ঢোকার পথ সরু নলের মতো। ঘাসফুল দিয়ে পথের ভেতরটা মুড়ে নেয়। জারুলগাছে এ রকম আমি দেখেছি। বাসার ভেতরেও থাকে ঘাসফুলের গদি। স্ত্রী মুনিয়া তিন-আটটি ধবধবে সাদা ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে ১৩-১৪ দিনে। বাচ্চাদের পোকামাকড় খাইয়ে বড় করে তোলে।
যদিও বিভিন্ন প্রজাতির মুনিয়া খাঁচাবন্দী অবস্থায় রাস্তাঘাট ও পেটশপে দেদার বিক্রি হচ্ছে। আজ পর্যন্ত সাদা-কোমর মুনিয়া কোথাও বিক্রি হতে দেখিনি। দুষপ্রাপ্যতার জন্যই হয়তো এ সুন্দর পাখিগুলো শিকারি ও বিক্রেতাদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে। যাহোক, কামনা করি পাহাড়ি সাদা-কালো মুনিয়াগুলো এভাবেই বেঁচে থাকুক অনন্তকাল।
আ ন ম আমিনুর রহমান | প্রথম আলো
ছবি ও ভিডিও: গুগল সার্চ রেজাল্ট
0 comments:
Post a Comment