12.4.11
ভুবন চিল
ভুবন চিলের ইংরেজি নাম ‘ব্ল্যাক কাইট’। বৈজ্ঞানিক নাম Milvus migrans govinda। গায়ের রং লালচে খয়েরি। ডানার ওপরে হালকা বাদামি টান ও ছোপ। ইলিশ মাছের মতো দ্বিখণ্ডিত লেজ। নৌকার হালের মতো লেজ ব্যবহার করে ঝটপট দিক বদল করতে পারে। উড়তে পারে বাতাসের প্রতিকূলেও। চোখ সব সময় হলুদ। মণিবন্ধে সাদা এলাকার পরিমাণ খুবই কম। ঠোঁট কালচে ও বাঁকানো ছুরির মতো ধারালো। দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ৬১ সেন্টিমিটার। ডাকে ‘চির চির চির’ করে।
আমাদের দেশে দুই ধরনের ভুবন চিল দেখা যায়। একটি আমাদের নিজেদের আবাসিক পাখি, অন্যটি শীতকালে অতিথি হিসেবে ভ্রমণে আসে। আকারে একটু বড়। ঢাকার কমলাপুর, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী ও মান্ডা এলাকায় ভুবন চিলের কিছু বাসা দেখা যায়। সকালে লাইন ধরে বিভিন্ন জায়গায় খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে। সন্ধ্যায় আবার ফেরে। ঝড় এলে গাছ থেকে মাটিতে নেমে আসে। ২০০৭ সালের এক রাতে কালবোশেখির কবলে পড়ে শত শত ভুবন চিলের ছানা মাটিতে পড়ে যায়। জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীদের শুশ্রূষায় পরের দিন সুস্থ হয়ে আকাশে উড়ে যেতে সক্ষম হয়। ভুবন চিল সাধারণত এক কিলোমিটার উচ্চতায় উড়ে বেড়াতে পারে। পাক খেতে পারে অসম্ভব দ্রুতগতিতে। অনেকক্ষণ পাখা না ঝাপটেও বাতাসে ভাসতে পারে সাবলীল ভঙ্গিতে। মাটির দিকে খাড়া ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে নেমে আসতে পারে। উড়তেও পারে একই নিয়মে।
ভুবন চিল আর কাকের সম্পর্ক সাপ-বেজির মতো। দুই চোখে দেখতে পারে না একে অপরকে। চিল ছোঁ মেরে নিয়ে যায় কাকের ছানা। আর চিল বাসা করতে গেলে ধাওয়া করে পাতিকাক। তাই সারা জীবনই এদের সম্পর্কটা দা-কুমড়ার। অথচ এরা আমাদের উপকারী পাখি। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গোধূলিবেলা পেরিয়ে যায়। চারদিকে নেমে আসে অন্ধকার। নগরের রাস্তায় জ্বলে ওঠে সোডিয়াম বাতি। এ সময় রাজু ভাস্কর্যের কাছে নেমে আসে একটি চিল। সেটিকে দেখে তেড়ে আসে দুটি পাতিকাক। তাড়া খেয়ে চিলটি উড়ে যায় আকাশে। পেছন পেছন ধাওয়া করে কাক দুটো। সন্ধ্যার ক্ষীণ আলোয় একসময় তাদের আর দেখা যায় না।
সাহাদাত পারভেজ | প্রথম আলো
0 comments:
Post a Comment