18.9.10

সমুদ্র ঈগল

সমুদ্র ঈগলের বিশ্বজুড়ে পরিচিতি স্টেলারস সি-ঈগল নামে। বিশালাকায় এই পাখি দেখা যায় কামচাটকার কুরিলস্কো লেকে। শীতকাল এরা কাটায় নিজের বাসায়। তখন মাছ ভেসে ওঠার অপেক্ষায় দিনাতিপাত করে। সাধারণভাবে দেখলে এদের আকৃতি সম্পর্কে ধারণা করা মুশকিল। ওদের বিশাল ডানা আকাশে না মেলা পর্যন্ত বোঝা যায় না এরা কত বিশাল আকৃতির পাখি। পূর্ণ বয়স্ক একটি সি-ঈগলের মেলে দেওয়া ডানার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তের দূরত্ব প্রায় ৯ ফুট। আর এর ওজন প্রায় ২০ পাউন্ড। এই ওজন উত্তর আমেরিকার বিখ্যাত ন্যাড়া শকুনের চেয়েও অনেক বেশি। এই সি ঈগলরা জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া পর্যন্ত উড়ে গেলেও ঘর বাঁধে শুধু পূর্ব রাশিয়ার বলকান শ্যান্টান্টের মতো দ্বীপাঞ্চলে। এদের নামকরণ হয়েছে জর্জ স্টেলারের নামানুসারে। তিনি জার্মানির প্রকৃতিবিজ্ঞানী ছিলেন। ১৭৪০-এর দশকে কামচাটাকায় অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে ইনি এদের দেখতে পান স্যামন মাছের জন্য বিখ্যাত কুরিলস্কো লেকে। স্টেলারস সি-ঈগলরা মারামারি না করে খাবার খেতে পারে না। একা একা খাবার সুযোগ পায় না কেউ। যুদ্ধ ছাড়া খাদ্য জোটে না কারো।
দিনের শুরু করে এরা দোয়েল আর কাকের গতিবিধি দেখে। নিজেরা প্রস্তুত থাকলেও ওরা যেন পছন্দ করে ছোট ছোট তীক্ষ্ন চোখের পাখিগুলোর পথ প্রদর্শনে। বিনিময়ে ছিটেফোঁটা ওদের ভাগ্য জোটে। ঈগলের বিশাল চঞ্চু স্যামনের শক্ত চামড়া ফেঁড়ে ফেললেই ছোট পাখিগুলো ভেতরে উকিঝুঁকি মেরে কামড়ে ছিঁড়ে একটু আধুটু খুবলে নিয়েই তুষ্ট থাকে। প্রথমে একটি ঈগল শিকার ধরলেই মুহূর্তের মধ্যে হাজির হয় অন্যরা। শুরু হয়ে যা উন্মাত্ততা। প্রথম শিকারী ডানা দিয়ে আগলে রাখতে চায় শিকার। ডান-বাম থেকে তখন চলতে থাকে টানা-হেঁচড়া পুরস্কারও অবশ্য মেলে। তখন লুণ্ঠনকারীর চেষ্টা চলে জিতে নেয়া খাদ্যকে আগলে রাখার। পর্যাপ্ত থাকতেও কেন এই ধস্তাধস্তি, টানা-হেঁচড়া? আলেকজান্ডার লেজিজিন বিশ্বাস করেন, স্যামনের চামড়া এত শক্ত যে ছেঁড়ার চেয়ে চুরি করা বরং সহজ। কেউ কেউ অবশ্য মনে করেন ওরা এভাবেই খেতে পছন্দ করে।
লাজুক সামুদ্রিক হেলিটাস ঈগল দেখতে পাওয়া যায় পৃথিবীর দুর্গম জনবিরল কিছু অঞ্চলে। কামচাটকা থেকে ৭০০ মাইল পশ্চিমে সি অব ওস্টস্ক-এর মরিসাস দ্বীপে থাকে এরা। প্রতি বসন্তেই এসব ঈগল একই বাসায় একই সঙ্গীকে নিয়ে ফিরে আসে। উঁচু গাছের পছন্দসই ডালে বাসা বাঁধে এমনভাবে যেন দূর থেকে নিজের বাড়ি আর মাছের খাড়ি দু-ই স্পষ্ট দেখা যায়। গাছের ছোট ছোট ডাল, শুকনো ঘাস আর ছোট ছোট উদ্ভিদ দিয়ে তৈরি হয় প্রায় দশ ফুট প্রশস্ত কিং সাইজ বেডের চেয়েও চওড়া প্লাটফর্ম। সুনসান নীরবতায় মাঝে মাঝে শোনা যায় খাদ্যের জন্য বাচ্চাদের চেঁচামেচি আর বাড়ির খুব কাছ দিয়ে উড়ে যাওয়া। দুষ্ট ঈগলদের উদ্দেশে বাবা-মায়ের শাসানি। স্যামনের আনাগোনো শুরু হওয়ার আগে বড় ঈগলগুলো স্রোতে মুখ ডুবিয়ে ছোট ছোট মাছ ধরে ঘরে আনে বাচ্চাদের খাওয়াতে। দেখা গেছে, শুধু মা ঈগলই বাচ্চাদের খাওযায়। নব্বই দিন লাগে বাচ্চা ঈগলের ওড়া শিখতে। সফেদ ঘাড়, লেজ, পা আর কপাল পুরোপুরি শক্তপোক্ত হতে সময় লাগে প্রায় ছয় থেকে আট বছর। প্রকৃতির বিচিত্র খেয়ালের এক অনন্য নিদর্শন এই স্টেলারের সি ঈগল।

0 comments:

Post a Comment